1. admin@kishorganjeralo.com : kishorganjeralo.com :
  2. admin@shadinota.net : shadinota net : shadinota net

গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪
  • ২২ বার পঠিত

তীব্র তাপপ্রবাহের মুখে বাংলাদেশে বৃক্ষরোপণের পক্ষে সরব প্রচারণা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে, এটি গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, উপযুক্ত সময়, স্থান ও ধরন বা প্রজাতি মেনে গাছ না লাগালে উপকারের বদলে বরং ক্ষতি বেশি হতে পারে।

“গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান” – বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত স্লোগানগুলোর একটি। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে বিপর্যস্ত পরিবেশকে রক্ষায় বৃক্ষরোপণের কথা বলে আসছেন সবাই।

এ বছর এপ্রিল মাসে তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ার পর সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন পরিসরে গাছ লাগানোর আহ্বান বেশ জোরেসোরে শোনা যায়। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ধরনের কর্মসূচিও দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তবে, এই সময়ে বৃক্ষরোপণের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন করতেও দেখা যায় কাউকে কাউকে।

এখন কি গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়? বৃক্ষরোপণের সময় কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত? এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধারণার ভিত্তি কতটুুকু?

‘এই আবহাওয়া নতুন বৃক্ষ-জীবনের অনুকূল নয়’
“এখন প্রকৃতির যে অবস্থা, যত খরাসহিষ্ণু গাছই লাগানো হোক না কেন, ঠিকমত যত্ন নিতে না পারলে নিশ্চিত থাকতে পারেন, শতভাগ গাছ মারা যাবে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ. খ. ম. গোলাম সারওয়ার।

গাছ থেকে পানি বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার নাম ‘প্রস্বেদন’। গ্রীষ্মকালে প্রস্বেদনের মাত্রা বেশি হয় বলে অধিক পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায়।

গাছ মাটি থেকে শিকড়ের মাধ্যমে পানি টেনে সেই ঘাটতি আবার পূরণ করে। কিন্তু, এবার বৈশাখ মাসে বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্থানে বৃ্ষ্টির দেখা মেলেনি।

যে কারণে অধ্যাপক সারওয়ারের এমন উক্তি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা বিবিসি বাংলাকে বলেন, যখনকার কাজ তখন করতে হবে।

এখন অসময়ে গাছ না লাগিয়ে বরং নতুন করে যেন বৃক্ষনিধন করা না হয়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি বলে অভিমত তার।

মি. ওয়ারা বলেন, নতুন গাছ লাগালে সেগুলোর যত্ন নিশ্চিত করতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা উচিত।

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানীর মতে, “বৃ্ষ্টি যেহেতু হচ্ছে না, নতুন পরিবেশে স্থানান্তর করলে পানি ছাড়া গাছগুলো ‘অ্যাডপ্ট'(মানিয়ে নেয়া) করতে পারবে না।””তাহলে তো তারা যে পরিবেশে আছে সেখানে বাঁচতে না দিয়ে মেরে ফেললাম,” যোগ করেন তিনি।বৃক্ষরোপণের উত্তম সময় কোনটি?
বাংলাদেশে চারা রোপণের উৎকৃষ্ট সময় হিসেবে সাধারণত বিবেচনা করা হয় বর্ষাকালকে।

তবে, রোপণের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে সারা বছরই ‘চারা-কলম’ লাগানো যায়, বলে জানাচ্ছে সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ. খ. ম. গোলাম সারওয়ার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বর্ষার শুরু অথবা শেষের দিকের সময়টা গাছ লাগানোর ভালো।”

তবে কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে জানা যাচ্ছে, প্রথম বৃষ্টির পরপরই চারা লাগানো উচিত হবে না। কারণ প্রথম কয়েক দিন বৃষ্টির পরপরই মাটি থেকে গরম গ্যাসীয় পদার্থ বের হয়, যা চারা গাছের জন্য খুবই ক্ষতিকর এমনকি চারা মারা যায়।

বলা হয়, যে কোনো গাছের চারা রোপণ করার সর্বোত্তম সময় দিনের শেষভাগে অর্থাৎ পড়ন্ত বিকাল বেলায়।

যেকোনো গাছ লাগালেই হল?
ফুলগাছ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষ রোপণের বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিতে দেখা যায় অনেককে।

বিভিন্ন সময়ে বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে মন্তব্য করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, “আমরা ভুল গাছ লাগিয়েছি ভুল জায়গায়। ঢাকা শহরের রাস্তার মাঝখানে বট গাছ লাগানো হয়েছে।”

উদাহরণ হিসেবে “ব্রিটিশ আমলে রেললাইনের পাশে গাছ লাগানোতে নিষেধাজ্ঞার” প্রসঙ্গ টানেন তিনি।

রেল লাইনের পাশে আকারে বড় হয়, এমন গাছের চারা লাগালে, গাছের শেকড় লাইনের মাটির নিচে ঢুকে লাইনটিকে অসমতল করে তোলে। এতে দুর্ঘটনার শংকা থাকে।

তাছাড়া, দূর থেকে রেলপথ দেখতে না পাওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কারণে “ব্রিটিশ শাসনামলে” রেল লাইনের পাশে ওই ধরনের বৃক্ষরোপণ “নিরুৎসাহিত করা হতো”।

“যে গাছে পাখি বসে না, বাসা বাধে না সে গাছ আমরা লাগাতে পারি না,” যোগ করেন তিনি।

ফুল গাছ সৌন্দর্য বর্ধক, তাই বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় অনেকেই ফুল গাছ লাগান।

অধ্যাপক আলফেছানী বলেন, ফুল গাছ নান্দনিকতা বাড়ায়। তবে ফলদ গাছ হলে তা পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীর জন্যও আশ্রয় ও খাবারের উৎস হয়ে উঠতে পারে।

“জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে এ ধরনের বনায়ন।”

আম-কাঠালের পাশাপাশি কড়ই, শালের মত গাছও ছায়া দেয়। বাঁচেও দীর্ঘদিন।

ফলে, গরমে যেমন প্রশান্তি দিতে পারে, তেমনি দীর্ঘদিন অক্সিজেন সরবরাহও করতে পারে।গাছ বাছাই করার উপায় কী?
কোনো এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে যেসব গাছের আধিক্য বেশি নতুন গাছ লাগানোর সময় সেগুলোই বেছে নেয়া পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

যেমন – মধুপুর বা ভাওয়াল বনাঞ্চল এলাকায় শাল গাছের উপস্থিতি অনেক বেশি।

তাই, সেখানকার আশেপাশের এলাকার মাটিতে শাল গাছ লাগানোটাই ভালো হবে বলে মত অধ্যাপক আ খ ম গোলাম সারওয়ারের।

“দীর্ঘদিন ধরে যে প্রাকৃতিক বন গড়ে ওঠে সেখানকার গাছগুলো সেই পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ভালোভাবে অভিযোজিত।”

ইউক্যালিপ্টাসের মতো আরও কিছু বিদেশি প্রজাতির গাছ নিয়ে গবেষক ও উদ্ভিদবিদদের উদ্বেগও রয়েছে।

তারা মনে করেন এসব গাছ বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের অপরিসীম ক্ষতি করেছে।

ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী বলেন, “উত্তরবঙ্গে একসময় ধানক্ষেতের পাশে ইউক্যালিপটাস লাগানো হতো। কয়েক বছর পরে দেখা গেল মাটিতে দূর্বাঘাস পর্যন্ত গজাচ্ছে না।”

মূলত বিদেশি প্রজাতি, যেমন: রেইনট্রি, সেগুন, আকাশমণি, আকাশিয়া, শিশু, বাবলা ও ইউক্যালিপটাস জাতীয় গাছের জন্য প্রচুর জায়গার দরকার হয় এবং এগুলো দেশি গাছের তুলনায় অনেক দ্রুততার সাথে বেশি পরিমাণে পুষ্টি মাটি থেকে শুষে নেয়।

ফলে, তাদের সাথে অন্য প্রজাতির গাছ বাঁচতে পারে না। এভাবে জৈববৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার অভিযোগ বেশ পুরনো।

“সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত কোন গাছটা লাগাবো, কোন গাছটা একেবারেই লাগাবো না,” বলেন গওহার নঈম ওয়ারা।গাছ কি জলবায়ু পরিবর্তন থামাতে পারে?
এই প্রশ্নের উত্তরটা আমাদের ধারণার চেয়েও জটিল।

সালোকসংশ্লেষণের(খাদ্য উৎপাদন) জন্য গাছ কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে থাকে। সেই কার্বন শাখা, কাণ্ড বা মূলে থেকে যায়। আর সমপরিমাণ অক্সিজেন বায়ুমণ্ডলে নির্গত হয়।

যে কারণে অক্সিজেনের উৎস হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় বৃক্ষকে।

কিন্তু, গাছ নিজের রেসপিরেশনের(শ্বাসগ্রহণ প্রক্রিয়া) সময় আবার কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে।

গ্যাস গ্রহণ এবং বর্জনের হার ও প্রক্রিয়ার ব্যাপারে সঠিক ধারণা পাওয়া কঠিন।

এ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান বা তথ্যের ঘাটতির কথা স্বীকার করছেন যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রব ম্যাকেঞ্জি।

“কার্বনের গতিবিধি সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে অনেক কিছুই এখনো জানতে পারিনি আমরা,” বলেন তিনি।

তবে, নেচার জিওসায়েন্সে ২০২১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য বলছে, বাড়তি গাছ রোপণ করলে তা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়াতে পারে।

ইউরোপের আবহাওয়ার ওপর ওই গবেষণাটি করা হয়েছিল।বৃক্ষরোপণের আলোচিত উদ্যোগ
২০১৯ সালে মাত্র তিন মাসের মধ্যে চারশো কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেয় ইথিওপিয়া।

এমন উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় বন পুনরুদ্ধার কর্মসূচি গ্রহণ করলেও, প্রশ্ন ওঠে দেশটি সত্যিই কি ওই বছর চারশো কোটি গাছ লাগিয়েছে কিনা।

গ্রিন লিগ্যাসি ইনিশিয়েটিভ নামে পরিচিত প্রচারণাটি পরিচালনা করেন দেশটির নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ।

প্রকৃত সংখ্যা যাই হোক না কেন, এতে কোন সন্দেহ নেই যে ইথিওপিয়ার সরকার তার দেশের মারাত্মক বন উজাড়ের সমস্যা মোকাবেলায় খুব বড় একটি প্রচেষ্টা চালিয়েছে।

বিশ্বজুড়ে রাজনীতিবিদরা তাদের দেশের বন পুনরুদ্ধারের জন্য ইথিওপিয়াকে উদাহরণ হিসাবে নিয়েছেন।

এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন এবং কৃষিকাজের যে ক্ষতিকারক প্রভাব রয়েছে তার বিপরীতে কী করা যেতে পারে, ইথিওপিয়া সেই শিক্ষাও দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্বনেতারা।

কাছাকাছি সময়ে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী প্রচারণায়, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো আরো লাখ লাখ গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দেয় এবং উদাহরণ হিসেবে তারা ইথিওপিয়ার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে।

লেবার পার্টি ২০৪০ সালের মধ্যে দুইশ’ কোটি গাছ, কনজারভেটিভরা প্রতি বছর কমপক্ষে তিন কোটির বেশি গাছ এবং গ্রিন পার্টি ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০ কোটি গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দেয়।

কানাডাও ১০ বছরের মধ্যে দুইশ কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 shadinota.net
Design & Development By Hostitbd.Com