সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে কৃষকদের ধান সরবরাহে জটিলতা, মাঠ পর্যায়ে প্রচারণার অভাব, সর্বোপরি ধান উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত দামের অসঙ্গতির কারণে দীর্ঘ সময়েও সফল হচ্ছে না ধান সংগ্রহ অভিযান।কৃষক নেতারা বলছেন, এটি সরকারের এক ধরনের রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। যেখানে বরাবরই উপেক্ষিত থাকছে তৃণমূল পর্যায়ের কৃষকরা। তবে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দাবি, অভিযান সফল করতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। একই সঙ্গে কৃষকদের সুবিধার কারণেই সরকারের এমন উদ্যোগ।
রংপুর খাসবাগ এলাকার কৃষক মো. জামাল উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল সরকারের ধান সংগ্রহের যে ঘোষণা তার কিছুই জানেন না তিনি। অথচ তিনি একজন প্রকৃত কৃষক।
রংপুর খাসবাগ এলাকার কৃষক মো. জামাল উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল সরকারের ধান সংগ্রহের যে ঘোষণা তার কিছুই জানেন না তিনি। অথচ তিনি একজন প্রকৃত কৃষক।
জামাল উদ্দিন বলেন, প্রতি মৌসুমে তিনি ২৫ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করে থাকেন। এবারও ২৫ বিঘা বোরো আবাদ করেছেন। অথচ সরকারের ৩২ টাকা কেজি দরে ধান সংগ্রহ অভিযানের কিছুই জানেন না। এমনকি তিনি অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ সময়ে কৃষি কার্ড পর্যন্ত পাননি।
জামাল উদ্দিনের মতো অনেক কৃষকই জানালেন সরকারের নির্ধারণ করা দামে কখনই তারা বাজার মূল্য পাননি এমনি সরকারি খাদ্য গুদামেও ধান দিতে পারেননি। কৃষি বিভাগ সরকারি খাদ্য গুদাম ধান দিতে কীভাবে তালিকা করেন সেটি সম্পর্কেও অজানা তারা। কেননা কোনো উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এ বিষয়ে কখনোই তাদের অবগত করেন না।
অনেক কৃষক জানান, সরকারি খাদ্য গুদাম ধান দেন ব্যবসায়ীরা। এখানে কৃষকদের দাম দেবার কোনো সুযোগ নাই।
রংপুর খাদ্য বিভাগের তথ্য বলছে, গেল কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। যার অন্যতম কারণ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের কৃষকদের যোগাযোগের অভাব। চলতি মৌসুমে সারা দেশে ৫ লাখ টন ধান সংগ্রের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ শুধু রংপুর অঞ্চলেই উৎপাদন হয় ২২ লাখ টনেরও বেশি। সুতরাং সরকারি খাদ্য গুদামে একজন কৃষক কী পরিমাণ ধান দিতে পারবেন সেটিই সহজেই বোঝা যায়। তবে এত ধান উৎপাদনের পরও কেন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না?
এমন প্রশ্নে রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আশরাফুল আলম সময় সংবাদকে বলেন, ধানের দর মূলত নির্ধারণ করা হয় বাজার স্থিতিশীল রাখতে। ধানের দাম সরকার নির্ধারণ না করলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তবে তিনি এও বলেন, এত ধান সরকারের কেনা সম্ভব না। যাতে মধ্যসত্বভোগীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন সে কারণেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কৃষক সংগঠক পলাশ কান্তি নাগ বলেন, ধান সংগ্রহের পদ্ধতি কৃষকবান্ধব করা না গেলে সরকারের এমন কর্মসূচিতে কৃষকরা নয়, লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা। কারণ অনুমান নির্ভর দাম নির্ধারণ করে ধান সংগ্রহ অভিযান কখনও সফল হবে না। তার মতে, এমন অভিযান সফল করতে হলে কৃষকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করতে হবে। একই সঙ্গে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রেও যারা কৃষিতে সম্পর্কিত তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেই নির্ধারণ করতে হবে।
চলতি বোরো মৌসুমে রংপুর বিভাগে উৎপাদনের মাত্র ২ শতাংশ ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর গেল বছর এর পরিমাণ ছিল আরও কম। তারপরও সংগ্রহ অভিযান সফল করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।
Leave a Reply