বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিটি আসনের জন্য যেখানে গড়ে ২০/২৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতা করে সেখানে ইংরেজি মাধ্যমে পড়া শিক্ষার্থীরা বলতে গেলে অনুপস্থিত থাকছে। শহরাঞ্চলের মধ্যবিত্তদের মধ্যে ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পাঠানো ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার জন্য তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে না। ভর্তি হচ্ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এ নিয়ে শিক্ষাবিদরা অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে আগ্রহী হওয়াসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মুখোমুখি হওয়ায় তারা অনুৎসাহিত হয়। এছাড়া ইংরেজি মাধ্যম থেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পরিবেশগত মিল থাকার কারণেও অনেক শিক্ষার্থীই এক ধরনের স্বস্তি বোধ করে। এসব কারণেই তাদেরকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে দেখা যায় না। ভর্তি পরীক্ষার যে পদ্ধতি তাতে ইংরেজি, বাংলা, সাধারণ বিজ্ঞান এই বিষয়গুলো প্রায় সব বিভাগের ভর্তি পরীক্ষাতেই রয়েছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় এনসিটিবি প্রণীত বইগুলো। এছাড়া ২০০ নম্বরের মধ্যে গণনা করা হয় ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল। এই ২০০’র মধ্যে ১২০ হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষার নম্বর আর ৮০ হচ্ছে তাদের এসএসসি ও এইচএসসি’র নম্বর। সেখানেও যারা ভালো করছে তারা এই ৮০ নম্বরের অধিকাংশ পাচ্ছে। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা এসব নম্বর না পাওয়ায় কারণে পিছিয়ে পড়ছে।
অবশ্য শিক্ষাবিদরা বলেন যে, ইংরেজি মিডিয়ামের জন্য আলাদা শিক্ষাবোর্ড গঠনসহ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রণীত ইংলিশ ভার্সনের সিলেবাস অনুসারে শিক্ষার্থীদের পড়াতে হবে। অন্যদিকে নতুন করে প্রণীতব্য শিক্ষানীতিতে ইংরেজি মিডিয়ামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসারেই পড়ানোর কথা বলা হবে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা বিদেশি কারিকুলাম পড়ে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পাস করে। আর গণিত, পদার্থ ও রসায়ন বিদ্যার মতো বিষয়ের ভিত্তিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস তৈরি হয়েছে। ফলে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা অসুবিধায় পড়ে। সুতরাং তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে চাইলে তাদেরকে নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সিলেবাস পড়তে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা জাতীয় শিক্ষাক্রমের ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তুা করে করা হয় সে কারণে ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ফলাফল আশানুরুপ হয় না।
ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. বজলুল মোবিন চৌধুরী বলেন, যেহেতু ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল এখন আর শুধু উচ্চবিত্তের স্কুল না, তাই রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত তাদের প্রবেশকে উৎসাহিত করা। এছাড়া প্রয়োজনে তাদের জন্য আলাদা শিক্ষাবোর্ড গঠনেরও পরামর্শ দেন তিনি।
Leave a Reply