1. admin@kishorganjeralo.com : kishorganjeralo.com :
  2. admin@shadinota.net : shadinota net : shadinota net
ব্রেকিং নিউজ :

বই না পেয়ে স্কুলবিমুখ শিক্ষার্থীরা

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৩৫ বার পঠিত

রাজধানীর সরকারি স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল। প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর এ স্কুলে মাত্র এক হাজার ২০০ জনের মতো শিক্ষার্থী বই পেয়েছে। বাকিরা খালি হাতে প্রতিদিন স্কুলে আসছে, ফিরে যাচ্ছে। এতে শিশুশিক্ষার্থীরা স্কুলে আসার উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। এছাড়া মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা স্কুল ছেড়ে বাইরে ঘোরাঘুরি করে সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরছে।

স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তফা শেখ বলেন, ‘প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম এবং দশম শ্রেণির বই পেয়েছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও নবমের বই আসেনি। আসতে কিছুটা দেরি হবে বলে জেনেছি।’প্রায় একই রকম পরিস্থিতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। সেখানে তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখনো কোনো বই পায়নি। দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দুইটি করে বই পেয়েছে। এছাড়া দুই শ্রেণিতে তিনটি করে বই দেওয়া হয়েছে। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অবশ্য সব বই পেয়েছে। যদিও ইংরেজি ভার্সনের কোনো বই এখনো শিক্ষার্থীরা হাতে পায়নি।

শুধু এ দুই স্কুল নয়, রাজধানীর অন্তত ১০টি সরকারি-বেসরকারি স্কুলে খোঁজ নিয়ে একই ধরনের তথ্য মিলেছে। তার মধ্যে রয়েছে নামি স্কুল হিসেবে খ্যাত মতিঝিল আইডিয়াল, ভিকারুননিসা নূন, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজও। এমন পরিস্থিতিতে বই ছাড়া খালি হাতে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন স্কুলে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।শিক্ষকরা বলছেন, তারা প্রতিদিন যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়ম করে যোগাযোগ রাখছেন। তবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে তেমন কোনো সুখবর নেই বলে জানানো হয়েছে তাদের। তারপরে হয়তো পর্যায়ক্রমে পাঠ্যবই স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার কাজে গতি আসতে পারে বলে জেনেছেন তারা।

তবে সন্তান হাতে নতুন পাঠ্যবই না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ অধিকাংশ অভিভাবক। কেউ কেউ অবশ্য দেশের পট-পরিবর্তনের কারণে বই পেতে দেরি হওয়ার বিষয়টি মেনে নিয়ে তুলনামূলক ‘কম অসন্তুষ্টি’র কথা জানিয়েছেন।‘বই নেই, স্কুলও নেই’
গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আজমাইন মারুফ। গত ১ জানুয়ারি বই পাবে জেনে আনন্দ-উদ্দীপনা নিয়ে মায়ের সঙ্গে সাত-সকালে স্কুলে এসেছিল। সেদিন বই না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যায় সে। শিক্ষকরা জানিয়েছিলেন, ‘৫ তারিখের মধ্যে বই চলে আসবে’। তবে সেই তারিখও পার। মারুফ এখন শিক্ষকদের কথাও বিশ্বাস করছে না।

স্কুলের ফটকের সামনে মায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে মারুফ বলে, ‘বই নেই, স্কুলে আসতে হবে কেন? স্কুলে আসার চেয়ে বাসায় গেম খেললে ভালো লাগতো। এখানে এসে তো কোনো লাভ নেই।’ রোববার বই দিয়ে দেবে বাবা…মায়ের এমন কথা শুনে কিছুটা বিরক্ত শিশু মারুফ। সে বলে, ‘কে বললো তোমাকে? স্যাররা… ও উনারা মিথ্যে বলছে। বই এ মাসে আর দেবে না।’
মারুফের মতোই বই না পেয়ে হতাশ মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী নূর ফাইজা। তার মা সিন্থিয়া পারভীন বলেন, ‘শিক্ষকরা প্রতিদিন বলেন আগামীকাল এসো, বই পাবা। কিন্তু বই তো আসে না। এতে ওর অনেক রাগ। স্কুলেও আসতে চাইছে না।’

বই পড়তে হাতে মোবাইল, গেম-সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝোঁক!
এবার বছরের শুরুতে মাত্র ৬ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত বই ছাড় করা হয়েছে ৮ কোটির কিছু বেশি। সেই হিসাবে এখনো ৩২ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বই দিতে না পারায় সরকার এবার ১ জানুয়ারি পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন করে। সে অনুষ্ঠানে সরকারের কর্মকর্তারা শিক্ষক-অভিভাবকদের পাঠ্যবইয়ের পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে শিক্ষার্থীদের পড়াতে অনুরোধ করেন। সঙ্গে জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

বই না পাওয়ায় বাবা-মা বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের বইয়ের পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে দিচ্ছেন। তবে এতে খরচ অনেক বেশি হওয়ায় অধিকাংশ বাবা-মা প্রিন্ট না দিয়ে নিজেদের মোবাইল ফোনে সন্তানকে বই ডাউনলোড করে দিচ্ছেন। ফলে বই পড়তে শিক্ষার্থীরা সারাক্ষণ হাতে মোবাইল পাচ্ছে।

অভিভাবকরা বলছেন, বই পড়তে মোবাইল ফোন হাতে দেওয়ায় তাদের সন্তানরা মোবাইল গেম ও ফেসবুকের রিলস ভিডিও দেখায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। এ নিয়ে তাদের দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল শাখার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আরিফুর রহমান। তার বাবা সোহাগ হোসেন বলেন, ‘ছেলের হাতে মোবাইল ফোন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এখন বাধ্য হয়ে দিতে হচ্ছে। সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা, রাত- সারাক্ষণ ওর হাতে মোবাইল। বই পড়ার কথা বলে মোবাইল ফোন নিলেও মূলত রিলস ভিডিও দেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করছে। খেতেও বসছে না, বাইরে খেলতেও যাচ্ছে না। বাজে অভ্যাসে অভ্যস্ত হচ্ছে।’

ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা
প্রতি বছরের শুরুতে বার্ষিক শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয় স্কুলে স্কুলে। তাছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং মিলাদ মাহফিল করে থাকে অনেক প্রতিষ্ঠান। অন্যান্যবার বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী বই পেয়ে যাওয়ায় ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে খেলাধুলার রিহার্সেল (মহড়া) করানো হয়।

এবার বই না থাকায় শিক্ষার্থীদের পুরোদমে এসব সহশিক্ষামূলক কাজে যুক্ত রাখার চেষ্টা করছেন শিক্ষকরা। বিশেষ করে রাজধানীর তুলনামূলক ভালো স্কুল বলে পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলো এ পথে হাঁটছে।

গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মদন কুমার জানায়, সামনে তাদের স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। গত বছর ১০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হয়েছিল সে। এবারও সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

অনেক শিক্ষার্থী বই না পেলেও দৌড়, লং জাম্প, বল ছোড়াসহ বিভিন্ন খেলাধুলার প্রস্তুতি নিতে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে স্কুলে আসছে বলে জানান সহকারী প্রধান শিক্ষক মোস্তফা শেখ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামনে আমাদের তিনটি ইভেন্ট। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মিলাদ মাহফিল। যেহেতু ক্লাস কম হচ্ছে, এ ফাঁকে শিক্ষার্থীদের আমরা সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে স্কুলে ধরে রাখার চেষ্টা করছি।’

তবুও স্কুলে উপস্থিতি কম
নতুন বছর, নতুন ক্লাস। অনেক নতুন সহপাঠী। তারপরও স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। এর পেছনে বই না পাওয়াকে দায়ী করছেন শিক্ষকরা। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল শাখার তিনটি শ্রেণির হিসাব করে দেখা যায়, উপস্থিতি মাত্র ৩৭ শতাংশ। শিক্ষকরা বলছেন, বই না পাওয়ায় অনেক অভিভাবক রিকশাভাড়া খরচ করে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে আনতে চাইছেন না। মোবাইল করে তারা বই এসেছে কি না, খোঁজ নিচ্ছেন।

একই চিত্র গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলেও। মাত্র ৪১ শতাংশ উপস্থিতি ছিল বুধবার। ভিকারুননিসা নূন, শেরেবাংলা নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্য স্কুলগুলোতেও উপস্থিতি ৫০ শতাংশের মতো। অর্থাৎ, বই না পাওয়ায় অর্ধেক শিক্ষার্থী নিয়মিত স্কুলে আসছে না।

শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সিরাজুম মুনিরা বলেন, ‘যাদের বাসা কিছুটা দূরে, তারা প্রতিদিন হয়তো দেড়শ থেকে ২০০ টাকা রিকশাভাড়া দিয়ে স্কুলে আসে। বই না থাকায় তারা আসতে চাইছে না। তাছাড়া অনেকে বই না থাকার অজুহাতে গ্রামের বাড়িতেও ঘুরতে যাচ্ছে। তারপরও অন্য স্কুলের চেয়ে আমাদের স্কুলে উপস্থিতি ভালো।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিশুরা বই না পেলে তাদের ক্লাসে ধরে রাখা কষ্টসাধ্য। শিক্ষকদের এখন সৃজনশীলতা দেখাতে হবে। অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা বই শিক্ষার্থীদের অভিনব পন্থায় কীভাবে পড়ানো যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। আনন্দময় সহশিক্ষায় তাদের ধরা রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে।’

বই ছাপানো-বিতরণে অগ্রগতি নেই
১ জানুয়ারি পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সনের উদ্বোধনকালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান তার বক্তব্যে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিকের সব বই চলে যাবে। ১০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের ৮টি করে বই এবং ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই পাবে শিক্ষার্থীরা।

তবে গত সপ্তাহে বই বিতরণে তেমন অগ্রগতি নেই। ১ জানুয়ারি এনসিটিবি বলেছিল প্রায় ৬ কোটি বই তারা ছাড়পত্র দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসগুলোতে পাঠিয়ে দিয়েছে। মাঝে ৭ দিন পার হলেও বই ছাড় করার হিসাবে তেমন পার্থক্য নেই।

এনসিটিবি কর্মকর্তাদের দাবি, প্রায় ৮ কোটি বই এ পর্যন্ত ছাড় করা হয়েছে। তবে ছাপাখানার মালিকরা বলছেন, সাড়ে ৬ থেকে ৭ কোটি বই স্কুলে গেছে। আরও দুই থেকে আড়াই কোটি বই ছাপার কাজ হয়েছে। সেগুলোও শিগগির পাঠানো যাবে। খুব দ্রুত কাজ করলেও বই দিতে ফেব্রুয়ারি মাসের পুরোটা সময় লেগে যাবে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রিয়াজুল হাসা বলেন, ‘আমরা জানুয়ারির মধ্যেই সব বই দেওয়ার জন্য কাজ করছি। আমাদের তৎপরতায় কোনো ঘাটতি নেই। আর্ট কাট বা মলাটের যে কাগজের সংকট ছিল, তা কাটিয়ে উঠতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।আশা করি, ধারণার চেয়ে আগে বই দিতে পারবো।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 shadinota.net
Design & Development By Hostitbd.Com