1. admin@kishorganjeralo.com : kishorganjeralo.com :
  2. admin@shadinota.net : shadinota net : shadinota net
ব্রেকিং নিউজ :

ঢাকার কূটনীতি যখন মেগাফোনে বাজ !!

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫
  • ২৫ বার পঠিত

সাইফুদ্দিন আহমেদ নাঈম।
ড. ইউনুস এবং সেভেন সিস্টার্স: কণ্ঠস্বর না কূটনৈতিক ক্ষেপণাস্ত্র?

রাজনীতি যেমন শব্দে গাঁথা ইতিহাস, কূটনীতি তেমনি নীরবতার ভাষা। কিন্তু যখন সেই নীরবতা আর কিছু বলে না, তখন মঞ্চে আসে মেগাফোন কূটনীতি—একটি সাহসী, জনমনোরঞ্জক, এবং প্রভাবশালী কৌশল, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অবস্থানকে সরাসরি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের উপযোগী করে তোলে।

সাম্প্রতিক সময়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের একাধিক বক্তব্য ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থানকে নতুন আলোয় এনে দাঁড় করিয়েছে। বিশেষত চীন সফরে তাঁর “সেভেন সিস্টার্স” প্রসঙ্গের আলোচনায় ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে যে ঢেউ তুলেছে, সেটি শুধু একটি মন্তব্য নয়—এটি এক ‘ম্যাপ-শিফটিং’ কূটনৈতিক কৌশল।

মেগাফোন কূটনীতি: সংজ্ঞা ও ইতিহাস

মেগাফোন কূটনীতি (Megaphone Diplomacy) হচ্ছে এমন এক কূটনৈতিক পন্থা, যেখানে দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় বিতর্ক কিংবা বার্তা গোপনে নয়, প্রকাশ্য জনমাধ্যমে উচ্চারিত হয়। এটি প্রায়ই ঘটে সংবাদ সম্মেলন, টেলিভিশন সাক্ষাৎকার, আন্তর্জাতিক সম্মেলন, বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে।

এই কৌশলটির উত্থান ঘটে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি, যখন গণমাধ্যম ও টেলিভিশনের বিস্তারের ফলে আন্তর্জাতিক বার্তা পৌঁছানো সহজ হয়। এর একটি আলোড়ন তুলেছিলো রোনাল্ড রিগ্যান বনাম মিখাইল গর্বাচেভ পর্ব—যেখানে প্রেসের মাধ্যমে দুই পক্ষ একে অপরকে কৌশলী বার্তা পাঠাতো।

১৯৮০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উন্মুক্ত সমালোচনা, যা আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করে এবং পরবর্তীকালে বর্ণবৈষম্য নীতির অবসানে ভূমিকা রাখে—এটিকে মেগাফোন কূটনীতির সফল নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়।

ড. ইউনুস এবং সেভেন সিস্টার্স: কণ্ঠস্বর না কূটনৈতিক ক্ষেপণাস্ত্র?

চলতি বছরের মার্চে, ড. মুহাম্মদ ইউনুস চীনের রাষ্ট্রীয় সফরে গমন করেন, যেখানে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এক ব্যবসায়িক সংলাপে তিনি উল্লেখ করেন:

“নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত। আমরাই এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।”

এই একটি বাক্য ভারতের ভেতরে তুলেছে কূটনৈতিক সুনামি। এ বক্তব্য কেবল ভৌগোলিক বাস্তবতা তুলে ধরে না, বরং এটি ছিল এক কৌশলগত ইঙ্গিত, যা স্পষ্ট করে দেয় বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের গুরুত্ব এবং ভূরাজনৈতিক ক্ষমতার বাস্তবতা।

বক্তব্যটি কি মেগাফোন কূটনীতির আওতায় পড়ে?হ্যাঁ—এটি নিখুঁতভাবে মেগাফোন কূটনীতির অন্তর্ভুক্ত, কারণ:

১. প্রকাশ্য মঞ্চে বিতর্কিত ভূরাজনৈতিক বার্তা: চীনের রাষ্ট্রপতি ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সামনে এই বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।

২. প্রতিপক্ষের স্পর্শকাতর এলাকাকে ইঙ্গিতে উন্মোচন: সেভেন সিস্টার্স ভারতের অতি স্পর্শকাতর অঞ্চল, যেটি বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সামরিক উত্তেজনার কেন্দ্র।

৩. নিজ দেশের কৌশলগত অবস্থান জোরালোভাবে উপস্থাপন: “আমরাই অভিভাবক” বাক্যটি নীরব হুমকি নয়, এটি ভূরাজনৈতিক ক্ষমতার এক সরব প্রকাশ।

৪. আন্তর্জাতিক মঞ্চে জনমত গঠনের চেষ্টা: চীন সফরের প্রসঙ্গ, রোহিঙ্গা ইস্যুর উল্লেখ, এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার প্রভাব ব্যাখ্যা করা ছিল আন্তর্জাতিক শ্রোতাদের কৌশলগত বার্তা পৌঁছানোর প্রয়াস।

এই কূটনৈতিক বার্তার তাৎপর্য কী?

ড. ইউনুসের বক্তব্য শুধু একটি দেশের সমুদ্রবন্দর বা ভৌগোলিক গুরুত্ব নিয়ে নয়—এটি ছিল ভারতের আঞ্চলিক আগ্রাসন নিয়ে ঢাকার অবস্থান স্পষ্ট করে তোলার প্রচেষ্টা। এটি রাষ্ট্রীয় বিবৃতি না হলেও, একটি ‘পলিটিক্যাল সাবটেক্সট’ তৈরি করে, যা পররাষ্ট্র নীতির ভবিষ্যৎ পরিসর নির্দেশ করে।

এটি ঠিক যে, ড. ইউনুস সরকারের মুখপাত্র নন, কিন্তু তিনি এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা—একটি অবস্থান যেখানে তাঁর প্রতিটি বাক্যই কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যাখ্যার দাবিদার। তাঁর বক্তব্যে কৌশল, সংকেত, এবং ভূরাজনৈতিক ম্যাপ বদলে দেওয়ার স্পৃহা আছে।

পৃথিবীর সেরা মেগাফোন কূটনীতিকরা জানেন—সব বার্তা কানে বলে না, কিছু বার্তা মাইক্রোফোনে বলতে হয়। আর সেই মাইক্রোফোন আজ তাঁর হাতে।

©️বিশ্লেষক ও লেখক : সাইফুদ্দিন খান নাঈম

এই বিশ্লেষণে ব্যবহৃত তথ্যে উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 shadinota.net
Design & Development By Hostitbd.Com