২০২০ সাল থেকে অ্যামেরিকা এই চুক্তির জন্য চেষ্টা করছিল। অবশেষে তা হতে চলেছে।
লেবাননের তরফে চুক্তি নিয়ে মূল আলোচনাকারী ছিলেন পার্লামেন্টের স্পিকার ইলিয়াস বউ সাদ। তিনি জানিয়েছেন, লেবানন যা চেয়েছিল, তা চূড়ান্ত খসড়ায় আছে।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, অ্যামেরিকার তরফ থেকে যে চূড়ান্ত প্রস্তাব এসেছে, তা সন্তোষজনক। খুব তাড়াতাড়ি চুক্তির কথা ঘোষণা হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করেন।
পশ্চিম তীরে বসতি উচ্ছেদ ও লেবাননে বিমান হামলা
বৃহস্পতিবার দখলকৃত পশ্চিম তীরের হেবরনের কাছে ফিলিস্তিনিদের বসতি গুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল৷ এসময় সেখানে সংঘাতের ঘটনা ঘটে৷ এদিকে একই দিনে লেবানন থেকে ছোঁড়া রকেটের জবাবে সেখানে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
গুড়িয়ে দেয়া ভবন
ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরে হেবরনের কাছে অবস্থিত ফিলিস্তিনিদের বসতি ভারি যন্ত্র দিয়ে গুড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল৷
পুলিশি অবস্থান
এসময় নিরাপত্তার জন্য সেখানে মোতায়েন করা হয় সীমান্ত পুলিশের সদস্যদের৷
আটক
এক পর্যায়ে স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়৷ ছবিতে ইসরায়েলের বাহিনীর হাতে আটক এক ফিলিস্তিনিকে দেখা যাচ্ছে৷
অসহায়ত্ব
বসতি উচ্ছেদ ও তার জের ধরে চলছিল সংঘাত৷ ছবিতে ফিলিস্তিনের এক নারীকে ইসরায়েলে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে কাঁদতে দেখা যাচ্ছে৷
সাউন্ড গ্রেনেড
সংঘাত চলাকালে ফিলিস্তিনিদের দিকে ইসরায়েলের সীমান্ত পুলিশের এক সদস্যকে সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়তে দেখা যাচ্ছে৷
টিয়ার গ্যাস
বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে৷
সতর্ক অবস্থান
সংঘাত চলাকালে ফিলিস্তিনিদের দিকে অস্ত্র তাক করে সতর্ক অবস্থানে ইসরায়েলের দুই পুলিশ সদস্য৷
বুধবার প্রতিবেশি লেবানন থেকে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে৷ দুইটি রকেটই উন্মুক্ত স্থানে পড়ে৷ হামলার দায় স্বীকার করেনি কোন পক্ষ৷ তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে রকেট ছোঁড়া হয়েছিল ইরান সমর্থিত হেজবুল্লাহ গেরিলাদের নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ লেবানন থেকে৷
ইসরায়েলের জবাব
এই ঘটনার পর প্রথমে ভূমি থেকে লেবাননে গোলা ছোঁড়ে ইসরায়েল৷ এরপর ‘রকেট হামলার স্থান ও সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা’ চালানো হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী৷ ছবিতে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর গাড়ি বহর দেখা যাচ্ছে৷
লেবাননের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় কোন হতাহত হয়নি বলে দাবি করেছে হেজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত আল-মানার টেলিভিশন৷ লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন এই হামলাকে তার দেশের প্রতি ইসরায়েলের আগ্রাসী মনোভাব হিসেবে অভিহিত করেছেন৷ তিনি একে লেবাননের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রতি সরাসরি হুমকি এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের রেজ্যুলেশনের বরখেলাপ বলেও টুইটে উল্লেখ করেন৷
দুই দেশের নেতা এবার চুক্তিতে সই করবেন।
মার্কিন প্রেোসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এটা অবশ্যই ঐতিহাসিক ঘটনা। লেবাননের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে তিনি বলেছেন, লেবাননের ক্ষেত্রে নতুন যুগ শুরু হলো। এই চুক্তি থেকে কোনো বিষয় উঠে আসলে, অ্যামেরিকা তার সমাধান করার চেষ্টা করবে।
প্রস্তাবিত চুক্তি নিয়ে যা জানা গেছে
দুই দেশের মধ্যে বিরোধের বড় জায়গা ছিল ক্যারিশ গ্যাস ফিল্ড, যা ভূমধ্যসাগরে বিতর্কিত এলাকায় পড়ে। লেবানন এই বিতর্কিত এলাকার একটা অংশ দাবি করে। কিন্তু ইসরায়েলের দাবি ছিল, এই জলসীমা পুরোপুরি তাদের এলাকা। অ্যামেরিকার তৈরি করা খসড়া চুক্তিতে বলা হয়েছে, এই জায়গাটা ইসরায়েলের অধিকারে থাকবে। কোয়ানা বলে আরেকটি গ্যাস ফিল্ড, যার বেশিরভাগ অংশ লেবাননে পড়ে, তা দুই দেশ ভাগাভাগি করে নেবে।
রোববার লন্ডন-ভিত্তিক সংস্থা এনার্জিয়ান ক্যারিশ থেকে ইসরায়েলের তটভূমি পর্যন্ত পাইপলাইনের পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে এছাড়া ফরাসি সংস্থা কোয়ানায় গ্যাসের সন্ধান করবে। ভবিষ্যতে এখান যে অর্থ পাওয়া যাবে, তার একটা ভাগ ইসরায়েল পাবে।
হেজবোল্লাহর পরিচয়
লেবাননের ইরান সমর্থিত আধাসামরিক গোষ্ঠী হেজবোল্লাহ৷ তাদের একটি রাজনৈতিক দল আছে, আছে একটি সামরিক শাখাও৷ সম্প্রতি তাদের শক্তি বেড়েছে৷
ইতিহাস
১৯৮২ সালে ইসরায়েলের দক্ষিণ লেবানন দখলের প্রেক্ষিতে মুসলিম নেতারা মিলে হেজবোল্লাহ গড়ে তোলেন৷ হেজবোল্লাহ শব্দের অর্থ ‘আল্লাহর দল’৷
দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলকে চলে যেতে বাধ্য করেছিল হেজবোল্লাহ৷ এরপর ২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহ আরেক দফা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল৷ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থেকে লেবাননকে রক্ষার কারণে শিয়াপন্থি হেজবোল্লাহর প্রতি সুন্নিসহ অন্য গোত্রের মানুষ ও লেবাননের সমাজে তাদের প্রতি এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে৷
শুরু থেকেই দেশ দুটি হেজবোল্লাহকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে এসেছে৷ বর্তমানে হেজবোল্লাহর সামরিক শাখা লেবাননের সামরিক বাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এবং সে অঞ্চলে তারা অন্যতম আধাসামরিক গোষ্ঠী হয়ে উঠেছে৷
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা লেবাননের গৃহযুদ্ধের পর হেজবোল্লাহ রাজনীতির দিকে মনোযোগ দেয়া শুরু করে৷ হাসান নাসরাল্লাহ (ছবি) ১৯৯২ সালে হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক অংশের নেতৃত্বে আসেন৷ বর্তমানে দেশটির শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের একটি বড় অংশ এবং খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় গোত্রের সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে উঠেছে৷
সশস্ত্র শাখা
গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য গোষ্ঠীর মতো হেজবোল্লাহ অস্ত্র ত্যাগ করেনি৷ প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির দলসহ অন্যান্য দলগুলো হেজবোল্লাহকে অস্ত্র ত্যাগের আহ্বান জানালেও তারা তা মানেনি৷ হেজবোল্লাহর যুক্তি, ইসরায়েল ও বাইরের অন্যান্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে অস্ত্র প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/AA
যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ক্যানাডা ও আরব লিগের দেশগুলোর দৃষ্টিতে হেজবোল্লাহ একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী৷ কিন্তু যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হেজবোল্লাহর বৈধ রাজনৈতিক শাখা ও তাদের সামরিক শাখাকে ভিন্ন চোখে দেখে৷
সিরিয়ার যুদ্ধে হেজবোল্লাহ
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে হেজবোল্লাহ৷ আসাদের টিকে থাকার পেছনে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে৷
শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বৃদ্ধি
অনেক দিন ধরেই লেবাননকে ঘিরে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলে আসছে৷ হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিবৃদ্ধি এবং সিরিয়া যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণ লেবাননসহ অত্র অঞ্চলে শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বাড়িয়েছে৷
ইসরায়েলর সঙ্গে নতুন দ্বন্দ্ব?
সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়ার মাধ্যমে ইরান ও হেজবোল্লাহ তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বাড়িয়েছে৷ বিষয়টিকে ইসরায়েল হুমকি হিসেবে দেখছে৷ ফলে সিরিয়ায় ইরান/হেজবোল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে বার কয়েক হামলাও করেছে ইসরায়েল৷ ইরান ও হেজবোল্লাহ সিরিয়ায় স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করুক, সেটি চায় না ইসরায়েল৷ ফলে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহর মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরুর আশংকা দেখা দিয়েছে, যেখানে ইরানও জড়িয়ে পড়তে পারে৷
হেজবোল্লাহ এর আগে বলেছিল, এই চুক্তি হলেই তারা ইসরায়েলে নাশকতার কাজ শুরু করে দেবে। তবে মঙ্গলবার লেবাননের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হেজবোল্লাহ এই চুক্তি অনুমোদন করেছে।
জিএইচ/এসজি (এএফপি, রয়টার্স)
Leave a Reply