২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কিছু ইতিবাচক উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এসব বিষয় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে পারে এবং সৎ ও নিয়ম মেনে চলা করদাতাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছে সংগঠনটি।
সোমবার (২ জুন) জাতীয় বাজেটের ওপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক বিবৃতিতে এ শঙ্কার কথা জানিয়েছে এফবিসিসিআই।
বিবৃতিতে বলা হয়, এফআইসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে অর্থ অধ্যাদেশ ২০২৫ খতিয়ে দেখা হয়েছে। বাজেটের কিছু ইতিবাচক দিককে স্বাগত জানালেও বেশ কয়েকটি বিধান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি, যেগুলো ব্যবসার প্রসারকে ব্যাহত করতে পারে এবং সৎ করদাতাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
‘ইতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে অধ্যাদেশটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতে চাপ কমানো এবং একটি পূর্বানুমেয় কর কাঠামো গঠনের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেছে। নির্মাণখাত ও প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ওপর উৎসে কর হ্রাস একটি বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ, যা এই গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে উল্লেখযোগ্য স্বস্তি দেবে। যৌথ উদ্যোগ (জেভি) প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশকে জেভি অংশীদারের করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য না করায় দ্বৈত কর আরোপের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে—যা একটি যুক্তিসংগত পদক্ষেপ। পাশাপাশি, আয়কর আইন ২০২৩-এর ওপর দ্বৈত কর পরিহার চুক্তির প্রাধান্য দেওয়াও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
অধ্যাদেশে কিছু বিতর্কিত বিষয়ও রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘এর মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো— যেসব তালিকাভুক্ত কোম্পানির ১০ শতাংশের কম শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে ইস্যু হয়েছে, তাদের জন্য অতিরিক্ত ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর ধার্য করা হয়েছে। এই করহার বৈষম্যমূলক ও ব্যবসার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
‘একইভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে লেনদেন করা কোম্পানিগুলোর জন্য পূর্ববর্তী কর রেয়াত সুবিধা প্রত্যাহার করাও দুঃখজনক। এটি দেশের ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের উদ্যোগের পরিপন্থি। আমাদের ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো প্রতিযোগী অর্থনীতির তুলনায় এটা পিছিয়ে দিতে পারে।’
বিবতিতে বলা হয়, বেতনভুক্ত মধ্যবিত্ত করদাতাদের ওপর প্রভাবও আমাদের উদ্বেগের কারণ। প্রাথমিক স্তরে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হলেও সামগ্রিক কর কাঠামোর পরিবর্তন মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে হচ্ছে।’
‘বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অগ্রিম কররোপ— যেখানে স্থানীয় মান সংযোজন ৫০ শতাংশের কম হলে অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপিত হবে না। এতে নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া সহজ হবে ও রিফান্ড দাবি কমবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে মান সংযোজন কম, সেখানে খরচ বাড়তে পারে। পাশাপাশি রেয়াত ও রিফান্ড পাওয়ার সময়সীমা চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করায় কার্যকর মূলধনের ঘাটতিতে থাকা ব্যবসার জন্য কিছুটা সুবিধা হবে।’
অনলাইন বিক্রয়ের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা ই-কমার্স ব্যবসার টিকে থাকা কঠিন করে তুলবে জানিয়ে বলা হয়, এই খাতের সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত করবে। বিক্রয় ও ক্রয় রেকর্ড ইআরপি সিস্টেমের মাধ্যমে ডিজিটালি সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা এবং কাগজে রেকর্ড রাখার প্রয়োজনীয়তা বাতিল করায় ডিজিটালাইজেশনের পথে এটি ইতিবাচক অগ্রগতি।
‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার মোট ৭ দশমিক ৯ লাখ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালন ও অন্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ লাখ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য ২ দশমিক ৩ লাখ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৬৪ লাখ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ২ দশমিক ২৬ লাখ কোটি টাকা (জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ), যা দেশীয় ও বৈদেশিক উৎস থেকে পূরণ করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা খাতে ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যখাতে ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা এবং কৃষিখাতে ৩৯ হাজার ৬২০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে, যা সামাজিক খাতের প্রতি সরকারের অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।’
Leave a Reply