দায়িত্বগ্রহণের প্রথম দিনেই নিজের মারকুটে ও আগ্রাসী রূপ দেখালেন ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর নতুন কমান্ডার সের্গেই সুরভিকিন। সকাল থেকে দফায় দফায় মিসাইল হামলায় কেঁপে উঠেছে রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের আধ ডজনের বেশি শহর।
ভূগর্ভস্থ ট্রেন চলাচল, পানি-বিদ্যুৎ সরবরাহ, সেলফোন ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকটি শহরে। কিয়েভে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউর দপ্তরের পাশাপাশি মিসাইল পড়েছে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অফিসের কাছেও। খবর তাস, বিবিসি, সিএনএন ও আলজাজিরার।
ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যম স্ত্রানা জানিয়েছে, রাজধানী কিয়েভ ছাড়াও লভিভ, দনিপ্রোপেত্রোভস্ক, ইভানো-ফ্রানভিস্ক ও খারকিভ শহরে মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। একইসময়ে ড্রোন ও রকেট হামলা চালানো হয়েছে ওডেসা, ঝিয়ৎমির, কোরোসতিন, পোলটাভা, রিভনি ও খেমেলনিতস্কি শহরে। এসব হামলায় কিয়েভ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বুরশতিনস্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।
কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিতেশকো বলেছেন, শহরের অতি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি মিসাইল হামলা হয়েছে। কিয়েভ মেট্রো রেল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
উক্রেইনাস্কায়া প্রাভদা জানিয়েছে, দেশের মধ্যাঞ্চলে কিয়েভ, পশ্চিমাঞ্চলে লভিভসহ অনেক শহরে সেলফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে দেশের অনেক জায়গায়।
সাদোভায়া শহরের মেয়র কুজনেৎসভ বলেছেন, মিসাইল হামলার পর লভিভের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কাজ করছে না। লভিভের গভর্নর ম্যাক্সিম কাজাতস্কি বলেছেন, শহরের বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো লক্ষ্য করে রুশ বাহিনী বেশ কয়েক দফা মিসাইল হামলা চালিয়েছে।
খারকিভের মেয়র ইহর ওলেক্সান্দ্রোভিচ তোরেকভ বলেছেন, মিসাইল হামলায় খারকিভ শহরের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে।
ইউক্রেনিয়ান রেলওয়ে জানিয়েছে, দেশের পশ্চিমাঞ্চলে রেলওয়ের কন্টাক্ট নেটওয়ার্ক ধ্বংস হয়েছে। রাজধানী কিয়েভে অন্তত তিন দফা মিসাইল চালিয়েছে রুশ বাহিনী। কমপক্ষে পাঁচটি মিসাইল কিয়েভের একেবারে কেন্দ্রস্থলে আঘাত হানে।
কিয়েভের ভলোদিরিস্কা স্ট্রিটে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউর একটি ভবনেও মিসাইল হামলা হয়েছে। একই সড়কে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি স্থাপনাও মিসাইল হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এমনকি পেচেরস্কি স্ট্রিটের পাশে বাঙ্কোভা স্ট্রিটে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির অফিসের আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে মিসাইল হামলা করা হয়েছে। স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, মিসাইল হামলার আগে কিয়েভে সতর্কতামূলক কোনো সাইরেন শোনা যায়নি।
ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাশিয়ার এসব মিসাইল শনাক্ত ও প্রতিহত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে ক্রিমিয়া সেতুতে গাড়িবোমা হামলার ঘটনার পর শনিবার সের্গেই সুরভিকিনকে ইউক্রেন কমান্ডের দায়িত্ব দেন পুতিন। সিরিয়ায় রুশ কমান্ডের নেতৃত্বে থাকাকালে সুরভিকিন প্রচণ্ড আগ্রাসী ও মারকুটে কমান্ডার হিসেবে পরিচিতি পান।
Leave a Reply