ক্রাইমিয়ার সাথে সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র সেতুতে বিস্ফোরণের পর নিরাপত্তা জোরদার করেছে রাশিয়া। শনিবার ওই বিস্ফোরণে সেতুটির একটি অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসকে দখলকৃত উপদ্বীপের সাথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এই সেতুর বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইউক্রেনের অংশ থাকা ক্রাইমিয়াকে নিজের ভূখণ্ডের সাথে রাশিয়া সংযুক্ত করেছে ২০১৪ সালে। এ সেতুটি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।
সেতুটিতে শনিবার বিস্ফোরণের ঘটনায় তিন জন মারা গেছে। রুশ কর্মকর্তারা বলছেন সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের কাজ শিগগিরই শুরু হবে।
রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী সেতু থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন এবং রবিবার সকাল থেকেই ডুবুরীরা পানির নিচে ক্ষতির দিকটি অনুসন্ধানে নামবে বলে রাশিয়ান বার্তা সংস্থাগুলো খবর দিয়েছে।
রাশিয়ার গণমাধ্যম সবসময় এই সেতুটিকে “শতাব্দীর সেরা নির্মাণকাজ” হিসেবে প্রশংসা করে আসছিলো। এটি সামরিক উপকরণ, গোলাবারুদ ও সৈন্য দক্ষিণ ইউক্রেনে পাঠানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে প্রায় উনিশ কিলোমিটার লম্বা এ সেতুর ধ্বংস হওয়া অংশটিতে আগুন দেখা যাচ্ছিলো ও ধোঁয়া উঠছিল।
ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার সাথে সংযুক্তির চার বছর পর ব্যাপক আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে সেতুটি খুলে দেয়া হয়েছিলো।
এবার ইউক্রেন যুদ্ধে এটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিল এবং সে কারণে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ বলেছেন এটি ছিল একটি যথাযথ লক্ষ্যবস্তু।
তবে ইউক্রেন এখনো এমন কোন ইঙ্গিত দেয়নি যে তারাই এ ঘটনার পেছনে ছিল।
তবে শনিবার রাতের ভাষণে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ঘটনাটির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলছিলেন, “আজকের দিনটি খারাপ দিন নয় এবং আমাদের রাষ্ট্রের ভূখণ্ডের জন্য রৌদ্রজ্জ্বল”।
রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ এখনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন অংশ পুনরায় খুলে দিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং শনিবারই বলেছে সেতুটি আংশিকভাবে সড়ক ও রেল যোগাযোগের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।
ক্রাইমিয়ার মস্কো মনোনীত গভর্নর সের্গেই আকসিওনভ বলেছেন প্রতিশোধ নেয়ার ইচ্ছাও কাজ করছে। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণযোগ্য- এটি অপ্রীতিকর, কিন্তু খুব মারাত্মক নয়।
ইউক্রেনের কর্মকর্তা ডেভিড আরাখামিয়া পার্লামেন্টে মি. জেলেনস্কির দলের প্রধান। তিনি বলেছেন, “রাশিয়ার অবৈধ স্থাপনা ধ্বংস হতে শুরু করেছে এবং আগুন ধরেছে।”
“কারণটি খুবই সাধারণ: আপনি বিস্ফোরক তৈরি করলে সেটি দ্রুত হোক আর দেরীতে হোক বিস্ফোরিত হবেই,” বলছিলেন তিনি।
ইউক্রেনের একজন এমপি বিবিসির সাথে আলাপকালে বলেছেন যারাই ঘটাক এটি ইউক্রেনের একটি বিজয় এবং রাশিয়ার জন্য বড় ক্ষতি”।
“সেতুটি ধ্বংস হয়নি, তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু পুতিনের ইমেজ ধ্বংস হয়েছে এবং সেটাই গুরুত্বপূর্ণ,” ওলেকসি গনশারেঙ্কা বলেছেন।
ক্রাইমিয়া সেতুর রাজনৈতিক, প্রতীকী ও কৌশলগত গুরুত্ব সম্পর্কে অত্যুক্তি করা কঠিন।
কার্চ প্রণালীর ওপর দিয়ে ১৯ কিলোমিটার (১২ মাইল) লম্বা এই সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল ২৭ কোটি ডলার।
ছবির উৎস,MYKHAYLO PODOLYAK
এর আগে রাশিয়ান কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন যে এটি বিমান, ভূমি ও পান- যে কোন জায়গার হামলা থেকে সুরক্ষিত। বিশেষ করে এটি ছিল ইউক্রেনীয়দের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে অন্তত একশ মাইল দুরে।
রাশিয়ার জাতীয় সন্ত্রাস দমন কমিটি বলছে সেতুটির সড়কপথে একটি লরি বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে, যার থেকে জ্বালানিবাহী একটি ট্রেনে আগুন ধরে সেতুটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
এ ঘটনায় দক্ষিণ রাশিয়ায় এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি করা হয়েছে।
ইউক্রেন এখনো এ ঘটনার সাথে তাদের সশস্ত্র বাহিনীর যুক্ত থাকার কথা না বললেও অতীতে ক্রাইমিয়াকে তারা অনেকবার লক্ষ্যবস্তু করেছিল।
গত মাসে ইউক্রেন ক্রাইমিয়ায় সিরিজ বিমান হামলার কথা বলেছিল। এর মধ্যে রাশিয়ার একটি বিমান ঘাঁটিতে হামলার ঘটনাও ছিল।
শনিবারের এ ঘটনার পর ইউক্রেনের সামাজিক মাধ্যমে আনন্দ উদযাপন হচ্ছে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক বলেছে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর ছবি দিয়ে তারা নতুন ডেবিট কার্ড ইস্যু করবে।
গত কয়েক সপ্তাহ রাশিয়ার দখল করা বেশ কিছু এলাকা পুনর্দখল করে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে কিয়েভ।
এদিকে বিস্ফোরণের পরপর রাশিয়া ইউক্রেন নেতৃত্ব দেয়ার জন্য নতুন কমান্ডার নিয়োগ দিয়েছে।
রাশিয়া এখনো ইউক্রেনের বিরাট এলাকা দখল করে আছে।
Leave a Reply