রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলে লাভের খাতা আরও ভারী করেছে তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। যা নিয়ে স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, উপরওয়ালার আয়ের চেয়েও বেশি আয় তাদের। বিলিয়ন ডলারের ব্যবসার পালে হাওয়া লাগিয়ে চলা কোম্পানীগুলো চড়া মূল্যে তেল-গ্যাস বিক্রি করেই যাচ্ছে।
ধরিত্রীর বুক চিড়ে বের করে আনা হয় তেল। এই জয়রথ থামার কোন লক্ষণই নেই। জীবনের প্রয়োজনে যা কিছু প্রয়োজন তার পুরোটাই অপরিশোধিত তেল কিংবা তার উপজাত থেকে নিংড়ে আনা হয় জীবন সাজাতে। তাইতো, এ থেকে তৈরীকৃত নানা আয়োজনের মূল উপাদানটি নিয়ে চলছে উম্মত্ত উন্মাদনা। বিশ্ব রাজনীতি কিংবা অর্থনীতি পুরোপুরি টিকে আছে এই কালো সোনায়।
ইউক্রেন যুদ্ধের দিন যত গড়াচ্ছে ততই তেলের বাজারের তেলেসমাতি যেন বদলে দিচ্ছে গতিপথ। যুদ্ধের শুরুতে নানা অনিশ্চিয়তায় সর্বোচ্চ ১৩০ ডলারে পৌছেছিলো জ্বালানি তেলের দাম। বছরের প্রথম ৪ মাসে গড় মূল্য প্রায় সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে। পরবর্তী ৪ মাসে ধরে রাখে তার ধারাবাহিকতা। এরপর নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ছোবলের পাল্লায় বছরের প্রথম আট মাসের গড় মূল্য শতকের ঘর থেকে খুব একটা কমেনি। এতেই মূল্যস্ফীতি-মুদ্রাস্ফীতি, নানা আন্দোলন ডানা বাঁধতে থাকে।
এই তেলের তেলবাজিতে বাজিমাত করেছে উৎপাদক ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। একচ্ছত্র আধিপত্য ছিলো পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহের। ওপেকভুক্ত কিংবা ওপেকভুক্ত নয় এমন দেশের প্রতিষ্ঠানের মিলে মিশে একাকার হয়ে যাওয়াটা ছিলো একেবারেই সাধারণ বিষয়। প্রথম আট মাসের আভাসে বছরের শেষ চার মাসের পরিস্থিতি হতে থাকে ভয়াবহ। দেখা যায়, শেষ চার মাসে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের হার এতটাই বেড়ে যায়, যাতে আঁতকে উঠে পুরো বিশ্ব। স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও তাদের আয়কে তুলনা করেছেন ঈশ্বরের আয়ের সাথে। সেই আয়ের পাল্লাটা কমার তো কোন লক্ষনই নেই বরং দিনে দিনে বাড়ছে।
সময় যতই গড়াচ্ছে ততই তেল নিয়ে রাজনৈতিক চালের যেন শেষ নেই। দাবার বোর্ডের এক একটি সৈন্যের এগিয়ে যাওয়া সাথে রাজা-রাণী কিংবা মন্ত্রী, সামন্তের ক্ষুরধার আক্রমণের চালিকা শক্তি এই অপরিশোধিত তেল। বছরের শেষ পেরেক ঠুঁকে নতুন বছরে এই তেলই যে বিশ্ব শাসন করবে তা কি আর বলে দিতে হয়?
Leave a Reply