বিশ্বের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক প্লাসের উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণায় বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে সৌদি রাজপরিবারের দূরত্ব আরেক দফা বেড়েছে৷
জানা গেছে, সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চাপ সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের লবিং পাত্তা দেয়নি রিয়াদ৷
মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে কাছের মিত্র সৌদি আরবের সঙ্গে ভালো যাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক৷ জামাল খাশোগজি হত্যা নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান, ইয়েমেন যুদ্ধ থেকে সমর্থন তুলে নেয়া এবং ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির ইস্যু নিয়ে ওয়াশিংটনের উপর নাখোশ রিয়াদ৷
রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার পর বিশ্ব রাজনীতির নতুন মেরুকরণে পড়েছে সেই প্রভাব৷ জুলাইয়ে বাইডেনের সৌদি সফরে তার পরিবর্তন যে হয়নি এখন সেই ইঙ্গিতই মিলছে৷ বরং দুই দেশের সম্পর্কের আরেকদফা অবনতি ঘটেছে৷
সম্প্রতি জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক প্লাস বিশ্ববাজারে অত্যাবশ্যকীয় এই পণ্যের সরবরাহ বড় আকারে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ওপেকের অন্তর্ভুক্ত ১৩ সদস্যের এই জোটে রয়েছে মস্কোর নেতৃত্বাধীন আরো ১০ দেশ৷
গত সপ্তাহে নেয়া সিদ্ধান্ত অনযায়ী, নভেম্বর থেকে তারা বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দৈনিক সরবরাহ ২০ লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনবে৷ ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অস্থির জ্বালানির বাজারে যা বড় এক ধাক্কা হয়ে এসেছে৷ এর ফলে গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ বেড়ে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম সপ্তাহ শেষে প্রায় ৯৮ ডলার ছুঁয়েছে৷
রয়টার্স বলছে ওপেক প্লাসের এই সিদ্ধান্তে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে সৌদি রাজ পরিবারের সম্পর্কের আরো অবনতি হয়েছে৷ এ নিয়ে দুই দেশের এক ডজন সরকারি কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছে বার্তা সংস্থাটি৷
সূত্র অনুযায়ী, ওপেকের তেলের সরবরাহে লাগাম টানা ঠেকাতে সৌদি আরবের উপর কঠোর চাপ প্রয়োগ করে হোয়াইট হাউস৷ কেনন গ্যাসোলিনের মূল্যের আরেক দফা বৃদ্ধির কারণে স্বভাবতই ইউএস কংগ্রেসের মধ্যমেয়াদী নির্বাচনে সংকটে পড়বে ক্ষমতাশীণ ডেমোক্রেটরা৷ পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধের এই সময়ে জ্বালানির উচ্চমূল্য থেকে রাশিয়া যাতে সুবিধা না পায় সেই দিকটিও নিশ্চিত করতে চায় তারা৷
সৌদি আরামকো কতো বড়?
অ্যাপলকে হটিয়ে আবারও বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে সৌদি আরবের তেল কোম্পানি সৌদি আরমকো৷ জেনে নিন, এই প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে কিছু তথ্য৷
অ্যারাবিয়ান-অ্যামেরিকান তেল কোম্পানি
আরামকোর যাত্রা শুরু ১৯৩৩ সালে৷ তখন নাম ছিলো অ্যারাবিয়ান অ্যামেরিকান অয়েল কোম্পানি৷ তখন তার সঙ্গে যুক্ত ছিল স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানি অব ক্যালিফোর্নিয়া যা বর্তমানে শেভরন৷
নাম পরিবর্তন
সত্তর ও আশির দশকে ধীরে ধীরে আরামকোর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিতে থাকে সৌদি সরকার৷ ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান নামকরণ করা হয়৷
দিনে আয় ১০০ কোটি ডলার
সৌদি আরামকো বিশ্বের বৃহত্তম জ্বালানি কোম্পানি৷ প্রতিদিন ১ কোটি ২৫ লাখ ব্যারেলের তেল প্রক্রিয়াজাত করে প্রতিষ্ঠানটি, যেখান থেকে আয় হয় ১০০ কোটি ডলার৷
১০,০০০ কোটি ডলার কর
২০১৭ সালে আরামকোর করের হার কমিয়ে দেয় সৌদি আরব৷ সেটি আয়ের ৮৫ ভাগ থেকে নামিয়ে আনা হয় অন্তত ৫০ ভাগে৷ তারপরও প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালে ১০ হাজার কোটি ডলার সরকারের কোষাগারে জমা দেয়ার তথ্য জানিয়েছে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ফিচ৷
তেলক্ষেত্রে হামলা
সৌদি আরামকোকে দেশটির জ্বালানি নির্ভর অর্থনীতির প্রতীক বলে ধরা হয়৷ যে কারণে অনেক সময় আরামকোর তেলক্ষেত্রকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে সৌদি আরবের শত্রুরা৷ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তেমনই দুটি স্থাপনায় ১৪ টি মিসাইল হামলার ঘটনা ঘটে৷
সরকার নিয়ন্ত্রিত
সৌদি সরকারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণও করে দেশটির সরকারই৷ সরকারের নীতি অনুযায়ী তেল উৎপাদন বা সরবরাহ কখনও বাড়ায়, কখনও কমায় আরামকো৷
সবচেয়ে বড় আইপিও
২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বাজারে প্রথমবারের মতো শেয়ার ছাড়ে আরামকো৷ রিয়াদের স্টক এক্সচেঞ্জে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বিক্রি করে দুই হাজার ৫৬০ কোটি ডলার মূলধন সংগ্রহ করে তারা৷ যার মাধ্যমে চীনা ই-কমার্স কোম্পানি আলিবাবাকে পেছনে ফেলে রেকর্ড গড়ে প্রতিষ্ঠানটি৷
বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি
প্রাথমিকভাবে আইপিও বিক্রির মাধ্যমে আরামকোকে দুই লাখ কোটি ডলারের কোম্পানিতে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান৷ সেখানে মূলধন দাঁড়ায় এক লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলারে৷ তারপরও বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে সৌদি আরামকো৷
শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার
২০১৯ সালে খুব বেশি সময় আরামকো শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি৷ সেই জায়গা দখল করে নেয় অ্যাপল৷ ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর তেলের দাম বেড়ে চলায় আরামকোর শেয়ার দরও বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে৷ ১২ মে আরামকোর মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় দুই দশমিক চার-তিন ট্রিলিয়ন ডলারে৷ এতে আবারও অ্যাপলকে হটিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে সৌদি কোম্পানিটি৷
Leave a Reply