1. admin@kishorganjeralo.com : kishorganjeralo.com :
  2. admin@shadinota.net : shadinota net : shadinota net
ব্রেকিং নিউজ :

লেবাননে ইসরায়েলি অভিযান, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক বিতর্ক

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৭ বার পঠিত

লেবাননে ইরানপন্থি মিলিশিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ক্রমশই আন্তর্জাতিক বিতর্ক ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এই অভিযানের বেশ কয়েকটি দিক আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগের মুখে পড়েছে। বিশেষত, বেসামরিক লোকদের উচ্ছেদ ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে।

ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে দক্ষিণ লেবানন, বেকা ভ্যালি ও বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলের দাহিয়া এলাকা থেকে প্রায় ১২ লাখ লেবানিজ নাগরিক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই এলাকাগুলো হিজবুল্লাহর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এলাকাগুলোতে ইসরায়েলি বিমান হামলা পরিচালিত হয়েছে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। যদিও ইসরায়েল দাবি করেছে যে, তারা কেবল সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করছে এবং বেসামরিক লোকদের ক্ষতির সম্ভাবনা কমাতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে লেবাননের অনেকাংশে বেসামরিক অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেছেন, ইসরায়েলের বিমান হামলায় বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে এবং বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তার মতে, এই ধরনের হামলা মানবিক সহায়তা কার্যক্রমেও প্রভাব ফেলছে।

হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরাল্লাহকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ফাইল ছবি: এপি
হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরাল্লাহকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ফাইল ছবি: এপি

অনেক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও সমালোচক ইসরায়েলের এই অভিযানকে ‘যুদ্ধাপরাধের’ শামিল বলে উল্লেখ করেছেন। লেবানিজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে। তবে কতজন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা ও কতজন সাধারণ নাগরিক সেই সংখ্যা স্পষ্ট করা হয়নি। মার্কিন কংগ্রেস সদস্য আয়ানা প্রেসলি মন্তব্য করেছেন, গাজার মতো লেবাননেও জোরপূর্বক উচ্ছেদ ঘটানো হচ্ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত। ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের (আইএনএসএস) আইন ও জাতীয় নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক ট্যামি ক্যানার বলেন, যারা ইসরায়েলকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করছে, তারা হয়তো যুদ্ধের আইন সম্পর্কে ঠিকমতো জানে না বা ইচ্ছাকৃতভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।

ক্যানারের মতে, ইসরায়েলের অভিযান সামরিক লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সঠিক ও প্রয়োজনীয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইসরায়েল বারবার বেসামরিক লোকদের সরে যাওয়ার জন্য সতর্কতা দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বৈধ।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বিমান ও স্থল অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানে চারটি পূর্ণাঙ্গ ডিভিশন অংশ নিচ্ছে। যদিও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এই অভিযানকে ‘সীমিত, স্থানীয় ও লক্ষ্যভিত্তিক অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবু এই অভিযানে হাজার হাজার সেনা সীমান্ত পার হয়ে লেবাননে অনুপ্রবেশ করেছে।

লেবাননে ইসরায়েলি অভিযান, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক বিতর্ক

ইসরায়েল দাবি করছে, হিজবুল্লাহ বেসামরিক লোকদের আবাসস্থলে অস্ত্র মজুত করছে ও বেসামরিক অবকাঠামোর ভেতরেই সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর ফলে বেসামরিক লোকেরা ক্ষতিগ্রহস্ত হচ্ছে। তবে এই অভিযানে ইসরায়েলের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো হিজবুল্লাহর সামরিক ক্ষমতাকে ধ্বংস করা এবং তাদের সীমান্ত থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, আমরা হিজবুল্লাহর রাদওয়ান বাহিনীকে পুরোপুরি ধ্বংস করছি এবং ইসরায়েলের নাগরিকদের সুরক্ষিতভাবে তাদের বাড়িতে ফেরার পথ পরিষ্কার করছি।

জেফাত অ্যাকাডেমিক কলেজে আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ের অধ্যাপক তালের মিমরান মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে হিজবুল্লাহর সঙ্গে চলমান শত্রুতা বিবেচনায় ইসরায়েলের বেসামরিক উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বৈধ ও প্রয়োজনীয়। তিনি বলেন, বর্তমান সামরিক পরিস্থিতিতে, বেসামরিক লোকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী যে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বৈধ।

জাতীয় নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক ট্যামি ক্যানারের মতে, যুদ্ধের আইন অনুসারে, বেসামরিক লোকদের সুরক্ষার জন্য তাদের সামরিক লক্ষ্যবস্তু থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া বৈধ। ইসরায়েলের দেওয়া সতর্কতা ও উচ্ছেদ প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলেছে।

তবে আন্তর্জাতিক আইনের বিশেষজ্ঞ সাঈদ বেনারবিয়া বলছেন, হিজবুল্লাহ সদস্যদের সাথে একই এলাকায় বসবাস করলেও লেবানিজ বেসামরিক জনগণ আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সুরক্ষিত। তার মতে, ইসরায়েলের আক্রমণ বেসামরিক লোকদের ওপর অতিরিক্ত ক্ষতি ডেকে আনছে। যা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

লেবাননে ইসরায়েলি অভিযান, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক বিতর্ক

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টার ও তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ এবং প্রায় ২০ জন শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এই হামলায় ছয়টি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়, তবে তুলনামূলকভাবে কম বেসামরিক প্রাণহানি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আক্রমণে হিজবুল্লাহর সামরিক নেতৃত্ব ও কমান্ড কাঠামোতে বড় ধরনের আঘাত লেগেছে।

ক্যানার উল্লেখ করেন, হিজবুল্লাহর নেতৃত্বকে টার্গেট করা এবং তাদের সামরিক ক্ষমতা দুর্বল করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অর্জন। এটি হিজবুল্লাহর সামরিক কার্যক্রমের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।

অন্যদিকে, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইসরায়েলের এই অভিযানের ফলে সৃষ্ট মানবিক সংকটের দিকে নজর রাখছে। তবে ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে বলে আসছে যে, তাদের এই অভিযান হিজবুল্লাহকে নির্মূল করে লেবাননের জনগণকে হিজবুল্লাহর সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে মুক্ত করবে।

ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযান ও এর পরবর্তী পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে বৈধ বলে মনে করলেও, আন্তর্জাতিক মহলে এই অভিযান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 shadinota.net
Design & Development By Hostitbd.Com