ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। আজ মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পূর্ণ হলো।
প্রধান উপদেষ্টাসহ এ সরকারের সদস্যসংখ্যা ২১। উপদেষ্টামণ্ডলীতে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার দুজন বিশেষ সহকারী, একজন আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত আছেন। মানবাধিকার, অর্থনীতি, প্রশাসন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলাসহ নানা ক্ষেত্রে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।এই সময় ৬ টি সংস্কার কমিশন গঠন, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এই সরকার। সম্প্রতি জাতিসংঘে নতুন বাংলাদশকে তুলে ধরেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাছাড়া পাচার হওয়া অর্থ ফেরত, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহতদের তালিকা প্রস্তুত, অর্থনীতিকে সচল রাখতেও বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন আবারও চালু করার বিষয়টি ছিল প্রশংসনীয়।
ক্ষমতা গ্রহণের পর গত দুই মাসে প্রশাসনের শীর্ষপদে ব্যাপক রদবদল করেছে সরকার, যা এখনও চলমান আছে। আর্থিকখাতসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছে সংস্কার উদ্যোগ। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে তাদের জায়গায় বসানো হয়েছে প্রশাসক। এদিকে কর্মবিরতি ও হামলার ভয় কাটিয়ে আবারও মাঠে ফিরেছে পুলিশ।বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে নানা পদে বসানো হয়েছে নতুন কর্মকর্তাদের। দুর্নীতিবাজ অনেক কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে, অনেককে করা হয়েছে ওএসডি। পরিবর্তন করা হয়েছে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতও।
পুঁজিবাজারের অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালী করতে গঠন করা হয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কালাকানুন বাতিল করার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সইও করা হয়েছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার বিরল সুযোগ পেয়েছেন। নানা কারণে প্রধান উপদেষ্টার এ সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সংকট ছিল, এ সফরে সেটি কাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
চার দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ ১২টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান।এছাড়াও বিশ্বব্যাংক, জাইকা, আইএমএফ, ইউএসএইড, এডিবিসহ আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সহযোগিতা দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
এদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) সরকারের রাজস্ব আদায় আগের অর্থবছরের তুলনায় ১১ শতাংশ কম হয়েছে। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। রেমিট্যান্সের প্রবাহও বেড়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার যাত্রা শুরু হয়েছে দুর্গম পথের মধ্য দিয়ে। দুই মাসে সরকার এই পথ কতটা পাড়ি দিতে পেরেছে, তার মূল্যায়ণ স্বাভাবিকভাবেই জনগণ করবে।
Leave a Reply