বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সরকার পতনের যে কোনো আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে সবরকম প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানাচ্ছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা রাজপথে সক্রিয় ভূমিকায়ও থাকবে।
বর্তমান সরকারকে হটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে বিএনপি এখন সারাদেশে ধারাবাহিক কর্মসূচী পালন করছে।
বিএনপির চলমান কর্মসূচীতে সরাসরি কোনো বাধা দিচ্ছে না বলেই দাবি করছে সরকারি দল। তবে বিরোধী দলের বিভাগীয় সমাবেশের আগে স্থানীয়ভাবে যানচলাচল বন্ধ করে পরোক্ষ বাধা সৃষ্টি করা সরকারি দলের কৌশল বলেই অনেকে মনে করেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি তুলেছে বিএনপি সেটি মেনে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলনের যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে, সেটি রাজপথে মোকাবেলা করা হবে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বিবিসিকে বলেন, বিএনপি আন্দোলন করে সরকার পতনের যে হুমকি দিচ্ছে সেটি সম্ভব হবে না।
“আওয়ামী লীগ যেকোনো পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাহলে তারা নির্বাচনে যাবে না, তারা আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাবে? একটা নির্বাচিত সরকারকে তারা আন্দোলন করে পতন ঘটাতে পারবে না। আওয়ামী লীগ এতো হালকা কোনো দল না।”
আওয়ামী লীগ নেতা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপিকে মোকাবেলায় রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে প্রস্তুত আছে আওয়ামী লীগ।
“আওয়ামী লীগ সরকারকে আন্দোলন সংগ্রাম করে কোনোদিন কেউ পতন ঘটাতে পারে নাই, কোনোদিনই পারে নাই। কাজেই মাঠ কীভাবে দখল করতে হয় মাঠ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় -সেটা আমরা ভালোই জানি। সময় হলেই দেখবেন।”
মি. রাজ্জাক বলছেন, “আমরা প্রস্তুত। আমরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আগেও লড়াই সংগ্রাম করে আসছি। আগামী দিনেও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য দেশ ও মানুষের কল্যাণ মঙ্গলকে নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।”
বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে সভাসমাবেশ এবং কর্মসূচী দিয়ে রাজপথ দখলে রাখা একটা বড় কৌশল।
বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচীর বিপরীতে সরাসরি পাল্টা কর্মসূচী ঘোষণা না করলে রাজপথে শক্তি দেখানোর কৌশল হিসেব এরই মধ্যে ঢাকায় যুবসমাবেশ এবং চট্টগ্রামে দলীয় মহাসমাবেশে কর্মসূচী দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে কয়েক লক্ষ মানুষকে জড়ো করে সরকারের প্রতি জনসমর্থন এবং মাঠের শক্তি দেখাতে চায় দলটি।
আগামী ১১ই নভেম্বর ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে যুবলীগ। এ সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সহযোগী এ সংগঠনটি রাজপথে আন্দোলনের একটা বড় শক্তি হিসেবে কাজ করে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: মইনুল হোসেন নিখিল বিবিসিকে বলেন, সরকার বিরোধীদের মোকাবেলায় রাজপথে শক্ত অবস্থানে থাকার প্রস্তুতি নিয়েছে সংগঠনটি।
“যেখানেই বিএনপি জামায়াতের ষড়যন্ত্র থাকবে, জঙ্গীবাদ থাকবে, পেট্রোল হামলা হবে, মানুষের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে, সেখানেই যুবলীগ তাদেরকে প্রতিহত করার জন্যে জনগণকে নিয়ে সে প্রস্তুতি আমরা ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছি এবং সেটার জবাব আপনারা দেখতে পাবেন।”
বাংলাদেশে স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যন্ত কর্মী এবং সংগঠন বিস্তৃত।
রাজপথে বিএনপিকে মোকাবেলায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা কর্মীরাও সক্রিয় ভূমিকায় যেন থাকে, সেটিও নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
আগামী ডিসেম্বরে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া তৃণমূল পর্যায়েও সম্মেলন করে নেতৃত্ব ঢেলে সাজানোর কাজ হচ্ছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা জেলা সম্মেলনেও বড় জমায়েত করে বিএনপির কর্মসূচীর একটা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও বলছেন, তারা রাজপথে আছে এবং রাজপথে থেকেই বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলা করবেন।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমদ বলেন, “আমরা জানি দেশি বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্র আছে। সামনের নির্বাচনকে সামনে রেখে। আমরা দলকে শক্তিশালী করার জন্য ইতিমধ্যেই সমস্ত ইউনিট কমপ্লিট করে জেলা সম্মেলন আমরা শেষ করেছি।”
এদিকে বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাবস্থার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিও একটা সংকটের মধ্যে পড়েছে।
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং দ্রব্যমূল্য, রিজার্ভ ও জ্বালানি সংকটসহ নানা ইস্যু সরকারের সমালোচনার বড় উপাদান হিসেবে সামনে আনছে বিএনপি।
একইসাথে অতীতে পর পর দুটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের উদাহরণ টেনে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিকেই বিএনপির আন্দোলনের প্রধান ইস্যু হিসেবে সামনে রাখছে।
সবমিলিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহত্তর আন্দোলনের একটা ক্ষেত্র তৈরি করতে চাইছে বিএনপি।
আওয়ামী লীগ নেতা ড. আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, “আমার মনে হয় না এসব ইস্যুকে কেন্দ্র করে তারা (বিএনপি) আন্দোলন করতে পারবে।”
“আন্দোলন করলে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তারা খুবই দক্ষ ও সুশৃঙ্খল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস একটা বৈধ সরকারকে তারা সমর্থন দেবে। এটা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। এবং ইনশাআল্লাহ আমরা তাদেরকে মোকাবেলা করবো,” তিনি বলেছেন।
আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে স্বভাবতই দলে সুবিধাভোগী এবং বঞ্চিত – দুটি শ্রেণী তৈরি হয়েছে।
এ কারণে দলের মধ্যে তৃণমূলে যে বিভক্তি বা কোন্দল আছে, সেটি সমাধান করে দলকে ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী করার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া বর্তমান সরকারের প্রতি দেশের আপামর মানুষের সমর্থন রয়েছে এ বিষয়টি দেখানোর জন্য বড় সভা-সমাবেশ করে রাজপথ দখলে রাখার পাশাপাশি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলোর প্রচারকেও গুরুত্ব দেবে আওয়ামী লীগ।
Leave a Reply