মতিউল ইসলাম :
মধ্য আফ্রিকার ডি আর কংগো, বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, উগান্ডা, কেনিয়া সহ বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পরেছে। আমাদের বাংলাদেশের নিকটবর্তী পাকিস্তানেও বর্তমানে ছড়িয়েছে।
মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি অবস্থা জারি করেছে। তবে অনেকেরই এই বিষয়ে ধারণা নেই। তাই মূল লক্ষণ, সংক্রমণের মাধ্যম ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে কিছু তথ্য শেয়ার করছি।
লক্ষণ:-
মাংকিপক্স একটি ভাইরাল সংক্রামক রোগ। সংক্রমণের ১-২১ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। প্রধান লক্ষণ হলো র্যাশ। ২-৪ সপ্তাহ র্যাশের পাশাপাশি নিচের লক্ষণগুলোও থাকতে পারেঃ—
– জ্বর
– গলাব্যথা
– মাথাব্যথা
– মাংসপেশিতে ব্যথা
– দূর্বলতা
– লিম্ফনোড বা লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া
– অনেকের অসুস্থতা প্রথমে র্যাশ দিয়ে শুরু হয়। অনেকের এমন নাও হতে পারে। অনেকে চিকেন পক্স বা অন্যান্য অসুখের র্যাশের সাথে এটিকে মিলিয়ে ফেলতে পারেন। এই র্যাশ প্রথমে ফ্ল্যাট থাকে, পরে তরলপূর্ণ ব্লিস্টারে পরিণত হয়। র্যাশে ব্যথা বা চুলকানিও হতে পারে। র্যাশ একসময় শুকিয়ে ঝরে পড়ে।
সাধারণত হাতের তালু, পায়ের পাতা, মুখ,গলা, কুচকি, যৌনাঙ্গ ও পায়ুতে র্যাশ বেশি হতে পারে। এর পাশাপাশি পায়ুপথে ব্যথা বা রক্তপাতও হতে পারে।
রোগ সংক্রমণের মাধ্যমঃ-
সাধারণত ত্বকে কাটা ছেঁড়া থাকলে, মিউকোসাল সারফেস যেমন মুখ, গলা, চোখ, যৌনাঙ্গের মাধ্যমে এমনকি শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেও এ রোগ হতে পারে।
ত্বকের মধ্যে লেসন থাকলে সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। সাধারণত স্পর্শ, চুম্বন, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে এই রোগ ছড়ায়। এমনকি ফেস টু ফেস কথা বললে, শ্বাস নিলেও ছড়াতে পারে। আক্রান্ত প্রাণীর কামড়, স্ক্র্যাচ, শিকার করা, চামড়া ছড়ানো, রান্না করা থেকেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত দ্রব্য যেমন কাপড়, চাদর, সুঁই ব্যবহার করলেও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। আক্রান্ত গর্ভবতী মা থেকে সন্তানেও এ রোগ ছড়াতে পারে।
রোগ নির্নয়ঃ-
ত্বকের ক্ষত থেকে স্যাম্পল নিয়ে PCR বা পলিমারেজ চেইন রিএকশনের মাধ্যমে ল্যাবরেটরিতে এটি নির্নয় করা হয়।
সংক্রমিত হলে কি করা উচিতঃ-
সকল ক্ষত বা স্ক্যাব ঝড়ে পড়ে নতুন চামড়া উঠা পর্যন্ত ঘরে থাকুন।
বাইরে বের হলে ক্ষত ঢেকে রাখুন এবং মাস্ক পরুন।
সাধারণত ভাইরাল অসুখগুলোর ওষুধ থাকেনা। যে যে লক্ষন থাকে সেগুলোর চিকিৎসা নিতে হয়। যেমন র্যাশ হলে সেটির যত্ন নিন, ব্যথা হলে সেটির জন্য ওষুধ খান।
প্রতিরোধঃ-
কোভিডের সময় আমরা যেসব সাবধানতা অবলম্বন করতাম, আবার সেই অভ্যাসগুলো ফিরিয়ে আনুন—
বারবার সাবান, হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
আপনার সঙ্গীর সাথে তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে আলোচনা করুন, যেকোনো কারো সংক্রমণের লক্ষণ দেখা গেলে শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকুন।
অন্য কারো ব্যবহৃত সামগ্রী ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অন্তত ১ মিটার দূরত্ব রেখে চলুন।
আক্রান্ত পশুপাখি এড়িয়ে চলুন।
যেসকল এলাকায় এই রোগ ছড়িয়েছে সেই এলাকায় ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ-
আপনার বা পরিচিত কারো মাংকি পক্সের লক্ষণ দেখা গেলে ১৬২৬৩ বা ১০৬৫৫ নাম্বারে কল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানাবেন।
নিজে জানুন অন্যদেরও জানতে শেয়ার করুন।
Leave a Reply