থমকে যাবে শিল্প, কমবে বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানসব ধরনের রপ্তানিতে দ্বিতীয়বারের মতো নগদ সহায়তা কমিয়েছে সরকার। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের অজুহাতে এখনই প্রণোদনা কমানোর এ সিদ্ধান্তের কোনো যৌক্তিকতা নেই, এমনটা বলছেন রপ্তানিকারকরা।
উদ্যোক্তাদের মতে, সুদহার বেড়ে যাওয়া, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং বর্ধিত মজুরি কার্যকরের ফলে নানামুখী সংকটে রপ্তানিখাত। এ অবস্থায় প্রণোদনা কমানোয় নেতিবাচক দিক তৈরি হবে রপ্তানিমুখী শিল্পে। কমে যেতে পারে বিনিয়োগ, ঝুঁকিতে পড়বে কর্মসংস্থান।কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সরকারের বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী প্রক্রিয়ায় সরকার যেমন প্রণোদনা দিতে পারবে না, তেমনি রপ্তানিকারকদের সমস্যাও দেখতে হবে। তারা টাকার বিনিময়ে গ্যাস-বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না বলেই ক্ষতিপূরণ হিসেবে নগদ সহায়তার প্রয়োজন পড়ে। প্রয়োজনে লজিস্টিক সাপোর্ট, বাণিজ্য সুবিধা ও বন্দর ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। কারণ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে রপ্তানি খাতের একটি সুবিধা কমানো হলে বিকল্প সুবিধার ব্যবস্থা না হলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সরকারের বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী প্রক্রিয়ায় সরকার যেমন প্রণোদনা দিতে পারবে না, তেমনি রপ্তানিকারকদের সমস্যাও দেখতে হবে। তারা টাকার বিনিময়ে গ্যাস-বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না বলেই ক্ষতিপূরণ হিসেবে নগদ সহায়তার প্রয়োজন পড়ে। প্রয়োজনে লজিস্টিক সাপোর্ট, বাণিজ্য সুবিধা ও বন্দর ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। কারণ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে রপ্তানি খাতের একটি সুবিধা কমানো হলে বিকল্প সুবিধার ব্যবস্থা না হলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রপ্তানি প্রণোদনা কমলো
গত ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছর অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৪৩ খাতের পণ্যে রপ্তানি প্রণোদনা/নগদ সহায়তা ঘোষণা করে। কিন্তু এবারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নগদ সহায়তা আগের চেয়ে অনেক কম পাবেন রপ্তানিকারকরা। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতেও পণ্যগুলোতে নগদ সহায়তা কমানো হয়েছিল।
‘নগদ সহায়তার বিষয়টা সরকারের সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা বাড়ানো-কমানোর দায়িত্বে নেই। সরকারের বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত আসে বাণিজ্য উৎসাহিত করতে। সরকারের নেওয়া যে কোনো বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’- মো. মেজবাউল হক, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র, বাংলাদেশ ব্যাংক
গত ১ জুলাই থেকে জাহাজি করা রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্রখাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা দেওয়া হবে দেড় শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারিতে এটি ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘নগদ সহায়তার বিষয়টা সরকারের সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা বাড়ানো-কমানোর দায়িত্বে নেই। সরকারের বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত আসে বাণিজ্য উৎসাহিত করতে। সরকারের নেওয়া যে কোনো বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে পোশাক শিল্প
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনার ফলে বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকদের প্রণোদনার হার তিন শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা কমিয়ে এখন দেড় শতাংশ করা হয়েছে। ইউরো অঞ্চলে বস্ত্রখাতের রপ্তানিকারকদের বিদ্যমান ১ দশমিক ৫০ শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা কমিয়ে ০ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের (নিট, ওভেন, সোয়েটার) অন্তর্ভুক্ত সব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে নগদ সহায়তা হবে ৩ শতাংশ, আগে এটি ছিল ৪ শতাংশ। বস্ত্র খাতের নতুন বাজার সম্প্রসারণ সুবিধা থাকছে ২ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারিতে এটি ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছিল।
‘রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে পোশাক শিল্প। নীতি সহায়তায় টিকে থাকা শিল্পখাত বৈশ্বিক সক্ষমতা হারাবে। বিনিয়োগ কমবে, ঝুঁকিতে পড়বে ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী পোশাক খাত।’ এস এম মান্নান কচি, সভাপতি, বিজিএমইএ
তৈরি পোশাক খাতে বিশেষ নগদ সহায়তা শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশে নামানো হয়েছে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ তৈরি পোশাকপ্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ)এ বিষয়ে বাংলাদেশ তৈরি পোশাকপ্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি এস এম মান্নান কচি জাগো নিউজকে বলেন, ‘রপ্তানিকারকরা এখন নানামুখী সংকটের মধ্যে রয়েছেন। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লেও চাহিদামতো তা মিলছে না, গ্যাস তো আসেই না। শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে, অন্যদিকে পোশাক পণ্যের দাম বাড়াননি ক্রেতা। বড় বড় ক্রেতা দেশে পোশাক পণ্যের ব্যবহার কমেছে। এসব কারণে রপ্তানি কমছে। আগামীতে রপ্তানিতে আরও খারাপ অবস্থা আসবে। সংকট কাটাতে সরকার চাইলে ২০২৯ সাল পর্যন্ত ভর্তুকি দিতে পারে।’
এস এম মান্নান কচি বলেন, ‘রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে পোশাক শিল্প। ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানির ৮৪ ভাগ নেতৃত্ব দেওয়া পোশাক শিল্পের টিকে থাকা কঠিন হচ্ছে। কিন্তু কোনো রপ্তানিকারকের সঙ্গে আলোচনা না করেই প্রণোদনা কমানোর প্রজ্ঞাপন হলো। এতে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হবে রপ্তানিতে। নীতি সহায়তায় টিকে থাকা শিল্পখাত বৈশ্বিক সক্ষমতা হারাবে। বিনিয়োগ কমবে, ঝুঁকিতে পড়বে ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী পোশাক খাত।’প্রণোদনা কমেছে পাট ও চামড়াজাত পণ্যেও
এখন থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ পাটপণ্যে নগদ সহায়তা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল। পাটজাত চূড়ান্ত দ্রব্যে (হেসিয়ান, সেকিং ও সিবিসি) প্রণোদনা ৭ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামানো হয়েছে। আগে যেটা ১২ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছিল। পাট সুতায় (ইয়ার্ন ও টোয়াইন) নগদ সহায়তা কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছিল।
চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারির আগে যা ছিল ১৫ শতাংশ। সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে অবস্থিত কারখানা ও সাভারের বাইরে অবস্থিত নিজস্ব ইটিপি রয়েছে এমন কারখানায় উৎপাদিত ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া রপ্তানিতে প্রণোদনা কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে এটা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছিল।
প্রণোদনা কমেছে পাট ও চামড়াজাত পণ্যেও
এখন থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ পাটপণ্যে নগদ সহায়তা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল। পাটজাত চূড়ান্ত দ্রব্যে (হেসিয়ান, সেকিং ও সিবিসি) প্রণোদনা ৭ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামানো হয়েছে। আগে যেটা ১২ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছিল। পাট সুতায় (ইয়ার্ন ও টোয়াইন) নগদ সহায়তা কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছিল।
চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারির আগে যা ছিল ১৫ শতাংশ। সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে অবস্থিত কারখানা ও সাভারের বাইরে অবস্থিত নিজস্ব ইটিপি রয়েছে এমন কারখানায় উৎপাদিত ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া রপ্তানিতে প্রণোদনা কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে এটা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছিল।
Leave a Reply