মূলত সপ্তম অষ্টম শতাব্দীতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠটীর আবির্ভাব ঘটে। সময়ের পরিপেক্ষিতে মধ্যপ্রাচীয় মুসলমান ও স্থানীয় আরাকানীদের সংমিশ্রণে রোহিঙ্গা জাতির উদ্ভব হয় (হাবিব ১৯৯৫:২০)। পরবর্তীতে চাঁটগাইয়া, রাখাইন, আরকানী, বার্মিজ, বাঙালি, ভারতীয়, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মানুষদের মিশ্রণে উদ্ভূত এই সংকর জাতি এয়োদশ চতুর্দশ শতাব্দীতে একটি আলাদা জাতি হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করে।
পঞ্চদশ শতাব্দী হতে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত আরকানে রোহিঙ্গাদের নিজেদের রাজ্য ছিল এবং অতীতে ইরাবতী নদীর উপত্যকায় দুটি রাজ্যও ছিল তাদের দখলে (সামাদ:২০১০)। অতঃপর দক্ষিণের রাজ্যের একজন রাজা ১৪০৪ খৃষ্টাব্দে তখনকার আরাকান রাজ্য জয় করেন। আরাকান রাজ্যেরে রাজা মেঘ সোয়া মউন্ বর্মি রাজার কাছে পরাজিত হয়ে পালিয়ে গৌড়ে আসেন। এই সময় গৌড়ের সুলতান ছিলে জালাল উদ্দিন মুহম্মদ শাহ্। তিনি সেনাপতি ওয়ালি খান কে বিশ হাজার সৈন্য নিয়ে আরাকান পাঠান এবং ওয়ালি খান যুদ্ধে জিতেন। কিন্ত তিনি মেঘ সোয়া মউনকে রাজা রাজ্যের দায়িত্ব না দিয়ে নিজেই সিংহাসনে বসেন ও বন্দি করেন আরকান রাজাকে।
মেঘ সোয়া মউন্ আবার কৌশলে গৌড় রাজ্যে পালিয়ে আসেন। গৌড়ের সুলতান এবার তাকে সিদ্ধি খান নামে আরেকজন সেনাপতির অধীনে ত্রিশ হাজার সৈন্য দেন আরকান উদ্ধারের জন্য। সিদ্ধি খান ওয়ালি খানকে যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং মেঘ সোয়া মউন্ কে আরকানের রাজা করেন। এইসময় গৌড় থেকে যাওয়া মুসলমান সৈন্যরা আরাকান থেকে যান।
রোহং শহরে বাস করতে থাকেন গৌড় থেকে যাওয়া মুসলমান সৈন্যরা এবং পরবর্তীতে এদের বংশধরই রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচিতি পায়। রোহিঙ্গারা যখন আরকানে যান তখন আরকান বার্মার অংশ ছিল না। আরাকানের অনেক রাজা তাদের দেশে চট্টগ্রাম থেকে অনেক মুসলমানকে নিয়ে যান আরকানে চাষাবাদ করার জন্য এবং তারাও পরবর্তীতে রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচিতি পান। মূলত এই কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভাষার সাথে চাঁটগাইয়া ভাষার এতটা মিল। রোহিঙ্গাদেরও যেহেতু রয়েছে চেনা শেকড়, তাই সবার প্রত্যাশা তারাও ফিরে যাক তাদের পরিচিত শেকড়ে।
Leave a Reply