আকাশ ও স্থলপথে গাজা উপত্যকার ওপর ইহুদিবাদী ইসরাইলের নয় মাসের আগ্রাসন ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে তো পরাজিত করতে পারেইনি উল্টো তেল আবিবকে অস্তিত্বের সংকটে ফেলে দিয়েছে।
গাজা যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল এই উপত্যকার ৮০% মানুষকে বাস্তুচ্যুত, ৩৭ হাজারের বেশি মানুষকে শহীদ এবং গাজার উপর ৭০ হাজার টনের বেশি বোমা নিক্ষেপ করেছে। পার্সটুডের রিপোর্ট অনুসারে, এই আগ্রাসনে গাজার অর্ধেকের বেশি স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, গাজাবাসী খাদ্য, পানি ও জ্বালানীর চরম সংকটে পড়েছে এবং উপত্যকার ২৩ লাখ অধিবাসীই দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও হামাস দুর্বল হয়নি। ফরেন অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিন এক প্রতিবেদনে বলেছে, গাজার ওপর ইসরাইলের নির্বিচার বোমাবর্ষণ সত্ত্বেও হামাসের শক্তি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফরেন অ্যাফেয়ার্সের প্রতিবেদনে হামাসের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের চলমান যুদ্ধ সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বহু ফিলিস্তিনির শাহাদাত সত্ত্বেও গাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ওপর বিশেষ করে যেসব এলাকায় বেসামরিক নাগরিকরা আশ্রয় নিয়েছেন সেসব এলাকার ওপর হামাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এছাড়া, এই সংগঠনের প্রতি গাজাবাসীর অভূতপূর্ব সমর্থন রয়েছে। আর এই সমর্থনের কারণে, গাজার যেকোনো অঞ্চল থেকে ইসরাইলি সেনারা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা হামাসের নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। খোদ ইসরাইলের সাম্প্রতিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, উত্তর গাজায় হামাসের উপস্থিতি বেড়েছে।
শক্তিমত্তার উৎস
সাধারণত একটি দেশের সামরিক শক্তি বলতে যা বোঝায়, হামাসের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। হামাসের কোনো রাষ্ট্রীয় কাঠামো নেই বরং এটি সম্পূর্ণ বেসরকারি একটি সংগঠন। হামাসসহ এ ধরনের অন্যান্য বেসরকারি প্রতিরোধ সংগঠনের প্রধান শক্তি হচ্ছে জনগণের মধ্যে তাদের সমর্থন ও যোদ্ধা ভর্তি করার ক্ষমতা। এ ধরনের সংগঠনের প্রধান শক্তিই হচ্ছে তাদের যোদ্ধার সংখ্যা। আর এই যোদ্ধা ভর্তি করার বিষয়টি শুধুমাত্র তাদের জনপ্রিয়তার ওপর নির্ভরশীল। গাজাবাসীর অন্তরে হামাস স্থান করে নিতে পেরেছে বলে তাদের যোদ্ধার অভাব নেই এবং এ কারণে হামাসকে পরাজিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
জনমত জরিপের ফলাফল
গত প্রায় নয় মাস ধরে গাজার ওপর ইহুদিবাদী ইসরাইলের ভয়াবহ বোমাবর্ষণের কারণে গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলবিরোধী যে অভিযান চালিয়েছিল তার প্রতি গাজাবাসীর সমর্থন কমেনি বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মার্চে পরিচালিত জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৭৩% ফিলিস্তিনি মনে করেন, গাজাবাসীর সামরিক বাহিনী হিসেবে হামাস ৭ অক্টোবরের অভিযান চালিয়ে উচিত কাজটিই করেছে। ফিলিস্তিনিদের এই বিশ্বাসের ফলশ্রুতিতে হামাস নতুন প্রজন্মের তরুণদের আরো বেশি নিজেদের দলে ভেড়াতে সক্ষম হয়েছে।
হামাসকে পরাজিত করার ক্ষেত্রে সামরিক উপায়কাজ করছে না
নয় মাসের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পর এখন এটা উপলব্ধি করার সময় এসেছে যে, হামাসকে শুধুমাত্র সামরিক উপায়ে পরাজিত করা সম্ভব নয়। এটি প্রকৃতপক্ষে তার বর্তমান সৈন্য সংখ্যার চেয়ে অনেক বড় একটি সংগঠন এবং এটি কেবল একটি মতাদর্শ নয়। হামাস হচ্ছে একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন যাকে কোনো অবস্থায় নির্মূল করা সম্ভব নয়।
Leave a Reply