1. admin@kishorganjeralo.com : kishorganjeralo.com :
  2. admin@shadinota.net : shadinota net : shadinota net
ব্রেকিং নিউজ :

ঘর দিয়েছে আত্মবিশ্বাস, বদলে গেছে জীবন

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০২৪
  • ৫৬ বার পঠিত

‘শ্বশুরের ভিটা আছে, তবে জায়গা ছিল অল্প। একটি মাত্র ঘর। সেখানে শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদসহ সবাই থাকতাম। স্বামীর তেমন কিছু ছিল না। দুই বছর হয়েছে এ ঘর পেয়েছি। এখন আল্লাহ ভালোই রেখেছেন। মোটামুটি খেয়েদেয়ে ভালো আছি। ছেলে-মেয়ে স্কুলে যায়। স্বামীও দোকান করে ভালো আয় করেন। এখন অনেক ভালো আছি।’

কথাগুলো বলছিলেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের পাঁচ কপাট গ্রাম সংলগ্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ইয়াসনুর বেগম। স্বামী জাফর উল্যাহ। ঘরের পাশেই মুদি দোকান করেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে তাদের। ছেলের বয়স তিন বছর, মেয়ের বয়স আট বছর। মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ‘নিজস্ব জমি ও ঘর হওয়ায় এখন দেশি মুরগি, হাঁস ও চিনা হাঁস পালন করি। নিজেদের খাওয়ার পাশাপাশি দু-একটা বিক্রিও করি। বাসার সামনেই শাক-সবজির চাষ করি। নিজেদের খাওয়ার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। আলাদা করে কেনা লাগে না। স্বামী আয় করেন, এখন আমাদের জীবন ভালো চলে। সবচেয়ে বড় বিষয় মাথাগোঁজার ঠাঁই আছে। নিজের বলতে একটা ঠিকানা আছে।’

ইয়াসনুরের প্রতিবেশী মোহাম্মদ হোসেন। পেশায় জেলে। চার সন্তান নিয়ে থাকতেন বেড়িবাঁধে সরকারি জায়গায়। তিনি বলেন, ‘খাবার জোটাতেই হিমশিম ছিল, সন্তানদের পড়াশোনা আর বাড়ি করা তো দুঃস্বপ্ন। কিন্তু জমিসহ ঘর পেয়ে ভালো আছি। একটা ঠিকানা হয়েছে। ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে। যেখানেই কাজে যাই, নিশ্চিন্তে থাকি স্ত্রী-সন্তান নিজের ঘরে আছে। কাজ শেষে নিজের বাড়ি ফিরি। আগে তো এটা ছিল না। ভাসমান জীবন ছিল। আমাদের যেহেতু ভাগ্য ফিরেছে, চেষ্টা করছি এবং আশা করি ছেলে-মেয়েরা আরও ভালো কিছু করবে।’শুধু ইয়াসনুর বা মোহাম্মদ হোসেন নন, তাদের প্রতিবেশী ৫০ পরিবারের অবস্থাও পাল্টেছে। তারাও স্বপ্ন দেখেন, সন্তানরা পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হবে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনায় হাঁস, মুরগি ও ছাগলের বিচরণ। প্রত্যেকের ঘরের সামনে ও পেছনে নানাধরনের শাক-সবজির আবাদ আছে। সবাই কিছু না কিছু আবাদ করেছেন। পুরো চিত্র বলে দিচ্ছে গত দুই বছরে বাসিন্দারা আশ্রয়ণের গ্রামকে স্বাভাবিক গ্রামে রূপ দিয়েছেন। এতে নিজেরা যেমন সুখী, গ্রামের অন্য সাধারণ মানুষও সন্তুষ্ট।

‘আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বিশ্বে একটি নন্দিত প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পটি অসহায় মানুষের চেহারা পরিবর্তন ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামীতে উন্নত, সমৃদ্ধ স্মার্ট জেলা হিসেবে গড়ে উঠবে ভোলা।’— ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান

দেশের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়ণের মানুষদের ভিন্ন চোখে দেখলেও এখানে সেটি নেই। কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলেন, এখানকার সিংহভাগ লোক নিম্নআয়ের, কে কাকে নাক সিটকাবে? বরং একে অপরের কাজে লাগে, ভালো চায়।

পাঁচ কপাট গ্রামের চায়ের দোকানে আড্ডায় গল্প হয় অনেকের সঙ্গে। তারা বলেন, এখানে নিম্ন আয়ের বেশিরভাগ লোক শ্রমজীবী। নদীতে মাছ ধরেন, রিকশা-ভ্যান চালিয়ে বা পরের জমিতে কাজ করে জীবনধারণ করেন। তাদের আয়ে খাবার জোগান দিতেই শেষ হয়ে যায়। টুকিটাকি চিকিৎসাও চলে যায়। কিন্তু বাড়ি করা বা শিক্ষায় মনোযোগী হওয়ার সুযোগ ছিল না। আশ্রয়ণের ঘর পাওয়ায় তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। সারাদিন পরিশ্রম করে একটা জায়গায় এসে নিরাপদে ঘুমাতে পারছেন। যার শক্তিতে তারা এগোচ্ছেন। এখন তারা চাইলে সন্তানদের লেখাপড়াসহ অন্য কাজেও মনোযোগ দিতে পারছেন। দূর-দূরান্তে কাজে গেলেও স্ত্রী-সন্তানদের নিরাপদ জায়গায় রেখে যেতে পারছেন।পাঁচ কপাটের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের ভোলা জেলাটিই তো বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। দ্বীপ জেলা। এখানে ঝড়-বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় নিয়মিত। যার কারণে আমরা উপকূলের মানুষ এগোতে গিয়েও পিছিয়ে যাই। বিশেষ করে এখানকার (উপকূলের) সিংহভাগ মানুষের নেই চালচুলো। নদীতে বাড়িঘর হারায়। আবার অনেকের হারানোর মতোও কিছু নেই।’
আবুল হোসেন বলেন, ‘যার বাড়িঘর নেই সে তো হতাশায় আরও পিছিয়ে থাকে। মন মরা থাকে। এসব মানুষকে ঘরবাড়ি দিয়ে শক্তি দিয়েছে সরকার। আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। তারা এখন ঠিকানা পাইছে। বাকি জীবন কষ্ট করে চলে যেতে পারবে।’
আশ্রয়ণের ঘর দিয়েছে আত্মবিশ্বাস, বদলে গেছে জীবনআশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর

জাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নাজিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে বেশিরভাগ মানুষ জেলে, নদীতে মাছ ধরে জীবন ধারণ করে। রিকশা-ভ্যান চালায়। পরের জমিতে কাজ করে। বেশিরভাগ লোকের ঠিকানাই ছিল না। ভাসমান। কারও থাকলেও একঘরে দু-তিন পরিবার থাকতো। অস্বাস্থ্যকর ও অমানবিক জীবন ছিল। তাদের বাছাই করে এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত খবর নিই। তারা বেশ ভালো আছে। সবাই খুশি। দিনশেষে কাজ করে এসে পরিবারের সঙ্গে ঘুমাতে পারে। সন্তানদের স্কুলে পাঠায়। আগে তো ঠিকানার অভাবে সন্তানদের বিয়ে দেওয়া দুরূহ ছিল, এখন সেটা সহজ।’

‘সরকার তো তাদের সবকিছু করে দেবে না। একটা ঠিকানা দিয়েছে। মানসিক শক্তি জুগিয়েছে। তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মেছে। তারা এখন নিশ্চিন্তে কাজ করে খায়, ঘুমায়। তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম লেখাপড়া করছে। সামনে আরও ভালো কিছু হবে। এটাই আমরা চাই, সরকারও চায়।’ বলছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন।

শুধু পাঁচ কপাট নয়, চরফ্যাশন উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের আদর্শগ্রামেও ১২৬ পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছে সরকার। এক বছর আগে সেখানে দুই শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। সেখানকার বাড়িগুলোতে জোয়ারের পানি ওঠা, সুপেয় পানির সংকট থাকলেও বাসিন্দারা নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়েছেন। সন্তানদের স্কুলে দিচ্ছেন। আকলিমা, হোসনে আরাসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তাদের কারোরই আগে ঘরবাড়ি ছিল না। ভাসমান জীবনযাপন করতেন। এখন একটি ঠিকানা পেয়ে সেটি অবলম্বন করে বুনছেন নানান স্বপ্ন। তারাও বিশ্বাস করে ফিরবে তাদের ভাগ্য।

এদের মতো চর কচ্ছপিয়া গ্রামেও ১৫০ জনকে নতুন আশ্রয়ণের আওতায় আনা হয়েছে। যার মধ্যদিয়ে গত ১১ জুন উপজেলাটি ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। একইভাবে জেলার সদর, বোরহানউদ্দিন ও মনপুরা উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পুরো জেলায় এরই মধ্যে ৬ হাজার ৩৫৬ পরিবারকে ঠিকানা দিয়েছে সরকার। যে কারণে দারিদ্র্যপীড়িত ভোলা জেলার পরিবেশ পাল্টে গেছে। সাগর ও নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করে বয়ে চলা ভাসমান জীবনে এসেছে স্থায়িত্ব। আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান মানুষ হচ্ছে স্বাবলম্বী।
ভোলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আরিফুজ্জামান বলেন, ‘ভোলার আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বিশ্বে একটি নন্দিত প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক এ প্রকল্পটি অসহায় মানুষের চেহারা পরিবর্তন করে দিয়েছে, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের আর্থসামাজিক উন্নতিসহ জীবনমানের উন্নয়ন ঘটছে। বাংলাদেশ সফলভাবে এগিয়ে চলছে, সেই গৌরবের এগিয়ে চলার একটি বড় অংশ কিন্তু এ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা। সেটি বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে অবধারিতভাবে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষ যেভাবে উপকারভোগী হবে তাতে আগামীতে ভোলা উন্নত, সমৃদ্ধ স্মার্ট হিসেবে গড়ে উঠবে।’

আশ্রয়ণের ঘর দিয়েছে আত্মবিশ্বাস, বদলে গেছে জীবন

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ভোলায় মোট ৬ হাজার ৩৫৬ ঘর বরাদ্দ পেয়েছি। ধাপে ধাপে এগুলো নির্মাণ করে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ভোলা সদর, চরফ্যাশন, বোরহানউদ্দিন ও মনপুরা উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু ঘর হলে শিগগির পুরো ভোলা জেলাকে ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা যাবে।’
সারাদেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীন ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৩ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ণের পাশাপাশি অন্য প্রকল্প মিলে ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯০৪ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের প্রায় ৪৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 shadinota.net
Design & Development By Hostitbd.Com