উচ্চমূল্যে কারণে বাংলাদেশে গত অগাস্ট মাস থেকে স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি কেনা বন্ধ আছে। স্পট মার্কেট বলতে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি না করে চাহিদা অনুযায়ী টেন্ডারের মাধ্যমে সরকার যে এলএনজি কেনে তাকে বোঝানো হয়।
তবে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির মাধ্যমে কাতার এবং ওমান থেকে এলএনজি কেনা অব্যাহত আছে।
পেট্রোবাংলার অধীনস্থ যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলএনজি কেনা হয়, সেই রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড আরপিজিসিএল বলছে, এলএনজির দাম এখন বিশ্ববাজারে অনেক বেড়ে গেছে, যে কারণে জুলাই মাসের পর থেকে আর স্পট মার্কেট থেকে সরকার এলএনজি কিনছে না।
স্পট মার্কেটে এখন প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম ৩২ ডলার।এদিকে, বাংলাদেশে গ্যাসের সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, আর ফল হিসেবে বিভিন্ন খাতে শিল্প উৎপাদন বাধার মুখে পড়ছে।
ফলে ব্যবসায়ীদের অনেকে সরকারের কাছে স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি আমদানির দাবি জানিয়েছেন।
তবে সরকার বলছে, এলএনজির উচ্চমূল্যের কারণে সে সিদ্ধান্ত এখনি নিতে পারছে না সরকার।
বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি তৈরি হওয়ায় জুলাই মাস থেকে লোডশেডিং এর মাধ্যমে সরকার ঘাটতি সমন্বয়ের চেষ্টা করছে।
স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির কী পরিস্থিতি
বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মোট ৬২ শতাংশের মত পূরণ করা হয় গ্যাসের মাধ্যমে।
এর মধ্যে স্থানীয় আবিষ্কৃত গ্যাসের মজুদের মাধ্যমে পূরণ হয় ৫০ শতাংশের বেশি। আর এলএনজির মাধ্যমে পূরণ হয় সাড়ে ১১ শতাংশ।
আরপিজিসিএলের এলএনজি মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বিবিসিকে বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদে করা চুক্তির উৎস দুইটি থেকে যে পরিমাণ এলএনজি পাওয়া যায়, তার থেকে দেশে চাহিদা বেশি।
সেটি পূরণ করা হয় স্পট মার্কেট থেকে। যা ১৬টি বহুজাতিক কোম্পানি থেকে কেনা হয়, এর মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানি সিঙ্গাপুরভিত্তিক।
এখন বছরে স্পট মার্কেট থেকে কতটা এলএনজি কেনা হবে, তা নির্ভর করে করে দেশে নিজস্ব গ্যাসের মজুদ থেকে বিদ্যুৎ, সার এবং অন্যান্য শিল্পে সরবারহের পর গ্যাসের যে চাহিদা থাকে, সেটি পূরণের জন্য যতটা দরকার হয় ততটা।
গত দুই বছরে কী পরিমাণ এলএনজি স্পট মার্কেট থেকে কেনা হয়েছে, তার পরিষ্কার সংখ্যা কর্মকর্তারা বলতে চাননি।
তবে, আরপিজিসিএলের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, এ বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত দুই বছরে কেনা মোট ২৯ কার্গো এলএনজি স্পট মার্কেট থেকে দেশে পৌঁছেছে।
একেক কার্গোতে তিন দশমিক দুই মিলিয়ন এমএমবিটিইউ (এলএনজির ইউনিট) গ্যাস থাকে।
ত্রিশে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে কেনা এলএনজি দেশে এলেও আরপিজিসিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, এটা আগেই কেনা এলএনজির সরবারহ এসেছে, সরকার এ বছরের জুলাই মাসের পর আর স্পট মার্কেট থেকে কেনেনি।
স্পট মার্কেট থেকে কেনা এলএনজির চাহিদা এবং পরিমাণ সম্পর্কে আরপিজিসিএল তথ্য না দিলেও, পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, গত অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে এলএলজি আমদানি বাবদ সরকারের মোট সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি খরচ হয়েছে।
তবে এ বছর স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ থাকায় এ বাবদ অর্থ সাশ্রয় হবে বলে বলছেন কর্মকর্তারা।
তবে এ বছরও এলএনজি আমদানি করতে সরকারকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।
এই মুহূর্তে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে হলে প্রতি ইউনিট ৩২ ডলার দামে কিনতে হবে।
দুই হাজার বিশ সালে যখন সরকার প্রথম স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে সেসময় প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম অনেক কম ছিল।
দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে কাতার এবং ওমান থেকে আনা হচ্ছে এলএনজি, যেখান থেকেই দেশের এলএনজি সরবারহের বড় অংশটি আসে।
এই দুইটি উৎস থেকে বছরে দেশে প্রায় চার মিলিয়ন মেট্রিকটন এলএনজি আমদানি করা হয়।
কাতারের সাথে ১৫ বছর মেয়াদী চুক্তির মেয়াদ ২০৩২ সালে শেষ হবে। আর ওমানের সাথে ১০ বছর মেয়াদী চুক্তির মেয়াদ ২০২৯ সাল পর্যন্ত।
মি. ইসলাম বলেছেন, কাতার এবং ওমান থেকে যে এলএনজি আমদানি করা হয় সেটি জিটুজি চুক্তিতে আনা হয়, অর্থাৎ উভয় দেশের সরকারি পর্যায়ে এই কেনাকাটা হয়।
তিনি জানিয়েছেন, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের ওঠানামার সাথে এলএনজির মূল্য নির্ধারিত হয়।
এই মুহূর্তে প্রতি ইউনিট এলএনজি কিনতে সরকারকে ১৩ ডলারের মত খরচ করতে হচ্ছে।
মি. ইসলাম বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে অগাস্ট মাস থেকে আর স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হচ্ছে না।
Leave a Reply