1. admin@kishorganjeralo.com : kishorganjeralo.com :
  2. admin@shadinota.net : shadinota net : shadinota net
ব্রেকিং নিউজ :

২ মার্চ উড়েছিল স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা

  • আপডেট সময় : শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪
  • ১১৪ বার পঠিত

বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উড়েছিল দেশটি স্বাধীন হওয়ার আগেই ১৯৭১ সালের দোসরা মার্চ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে সে পতাকা উড়িয়েছিলেন তৎকালীন ছাত্র নেতারা। পতাকা উত্তোলনের পেছনে মূল ভূমিকা রাখেন তখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।

পতাকা ওড়ানোর ঘটনা
একাত্তরের দোসরা মার্চে ছাত্রদের পক্ষে পতাকাটি উত্তোলন করেছিলেন তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম আব্দুর রব। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, পতাকা উত্তোলনের ঘটনা মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে প্রচন্ডভাবে আন্দোলিত করেছিল।

মিস্টার রব জানিয়েছেন, সেদিন সমাবেশ ছিল বটতলায়, কিন্তু বটতলায় পতাকা ওড়ালে সবাই দেখবে না বলে তারা কলাভবনের দক্ষিণ-পশ্চিমের গাড়ী বারান্দার ছাদ থেকে সেটি উত্তোলন করেছিলেন।

পতাকা ওড়াতে আ স ম আব্দুর রব ছাড়াও ডাকসুর তৎকালীন জিএস আব্দুল কুদ্দুস মাখন, ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ কলাভবনের দোতলায় উঠেন। সেখান থেকে রেলিং টপকে তারা গাড়ি বারান্দার ছাদে অবস্থান নিয়েছিলেন।

এর মধ্যে বেলা এগারটার দিকে ছাত্রলীগের তখনকার ঢাকা নগর শাখার সভাপতি শেখ জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কুড়ি-পঁচিশ জনের একটি দল একটি ফ্লাগমাস্টের মাথায় পতাকাটি বেঁধে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে দিতে জহুরুল হক হল থেকে বটতলার জনসমুদ্রের দিকে আসতে থাকে।

তখন গগনবিদারী স্লোগানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ পুরো এলাকা কাঁপছিল বলে এবং অসংখ্য মানুষের মধ্য দিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে পতাকাসহ ছাত্ররা কলাভবনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো।

সেখান থেকেই পতাকাটি হাতে নিয়ে অপরাপর ছাত্রনেতাদের সাথে নিয়ে স্বাধীণ বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক পতাকা ওড়ান আ স ম আব্দুর রব।

সেই অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে মিস্টার রব বলেছেন, “পতাকা উত্তোলন স্বায়ত্তশাসন বা দ্বিজাতি তত্ত্বকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিল। তখন শুধু একটি পথই খোলা ছিল স্বাধীনতা।”

“মানুষের মনে এ ধারনার জন্ম দেয় যে পতাকা হচ্ছে স্বাধীনতার ঐতিহাসিক সত্তা। বাঙালির স্বপ্ন পূরণের বয়ান হচ্ছে এই পতাকা।”

পতাকাটি কারা বানিয়েছিল
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক এম এ হাসান বলছেন পতাকাটি তৈরি হয়েছিলো আগেই, যার পেছনে ছিল তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্ররা। এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ পরবর্তীতে হয়েছিল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি বা বুয়েট।

মি. হাসান বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাত্ররা দোসরা মার্চে হল থেকে পতাকাটি এনে উত্তোলন করেছিলো।

অধ্যাপক এ কে এম শাহনেওয়াজ বলছেন একটা নিউক্লিয়াস আগেই গঠিত হয়েছিলো সিরাজুল আলম খান, কাজী আরেফ আহমেদ, শিবনারায়ণ সহ একদল ছাত্রকে নিয়ে।

তারাই পতাকা তৈরি ও উত্তোলনের কাজটি করেছিলেন। আর ওই পতাকা স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রের প্রস্তাব করেছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ আর স্কেচ করেছিলেন হাসানুল হক ইনু।

আ স ম আব্দুর রব বলছেন নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তৈরি করা হয়েছিলো ১৯৭০ সালের ছয়ই জুন সন্ধ্যায় তখনকার ইকবাল হলের ১১৬ নম্বর রুমে।

সেই রাতেই পতাকা তৈরির বিষয়টি শেখ মুজিবুর রহমানকে অবহিত করে তার সম্মতি আদায় করেন আব্দুর রাজ্জাক।

তখনকার ছাত্রনেতা মনিরুল ইসলাম, শাহজাহান সিরাজ ও আ স ম আব্দুর রবকে ডেকে নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্ত মতো পতাকা তৈরির কথা জানান কাজী আরেফ আহমেদ।

মিস্টার রব বলছেন কাজী আরেফ আহমেদ, শিব নারায়ণ দাস সহ ২২ জন পতাকা তৈরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

১৯৭০ সালের ছয়ই জুন পতাকাটি তৈরির পরদিন সাতই জুন পল্টন ময়দানে তখনকার ছাত্রনেতাদের গঠিত জয়বাংলা বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে সেটি তুলে দেন।

মিস্টার রহমান পতাকাটি গ্রহণ করে তার সাথে থাকা তার জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের হাতে দিলে তিনি নগর ছাত্রলীগের নেতা শেখ জাহিদের হোসেনের হাতে তুলে দেন।

মিস্টার হোসেন পরে সেটিই একাত্তরের দোসরা মার্চে হল থেকে কলাভবনের সামনে নিয়ে আসেন উত্তোলনের জন্য।

এর পরদিন তেসরা মার্চে স্বাধীনতা ইশতেহার পাঠেরও সময় ছাত্র নেতৃবৃন্দ স্বাধীন বাংলাদেশের এই পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।

অবশ্য বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পতাকা থেকে মানচিত্র বাদ দিয়ে কামরুল হাসানে ডিজাইনে করা লাল সবুজের পতাকাটিই বাংলাদেশের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়।

পতাকা আগেই তৈরি হয়েছিল
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’র আহবায়ক ড. এম এ হাসান বলছেন, দোসরা মার্চের পতাকা উত্তোলনের পর সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশের পতাকা উড়তে শুরু করে। এমনকি তেইশে মার্চে পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে পুরো পূর্ব পাকিস্তানে ক্যান্টনমেন্ট গভর্নর হাউজ ছাড়া সব জায়গায় বাংলাদেশের পতাকাই উড়ানো হয়েছিলো।

“পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিলো। এটি দেখেই সবাই বার্তা পায় যে অচিরেই স্বাধীন দেশ পাবো আমরা,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

‘মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ হাজার বছরের উত্তরাধিকার’ বইয়ের লেখক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম শাহনেওয়াজ বলছেন, পতাকা উত্তোলনের উদ্যোগটা ছিলো ছাত্রদের। তারা আগে থেকে এটি তৈরি করেছে, যা পরে শেখ মুজিবুর রহমানকে দেয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সবচেয়ে উত্তাল দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয় একাত্তরের মার্চ মাসকেই এবং এ মাসের শুরুতেই স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের পর সাতই মার্চে রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ মূলত একটি অনিবার্য যুদ্ধের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিলো জাতিকে।

শেষ পর্যন্ত সেই যুদ্ধ শুরু হলো একাত্তরের পঁচিশে মার্চে পাকিস্তানী বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে ঢাকায় নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ শুরুর মধ্য দিয়েই।

ফলশ্রুতিতে ছাব্বিশে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান এবং শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের নয় মাস ব্যাপী স্বাধীনতার লড়াই।

পতাকা উত্তোলনের সাথে জড়িত তখনকার ছাত্র নেতারা ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষকরা বলছেন সত্তর সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে পাকিস্তানী নেতাদের টালবাহানা শুরুর পর তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে যে তুমুল ক্ষোভ বিক্ষোভ তৈরি হয়েছিলো সেটিকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছিলো কলাভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের ঘটনা।

হাজার বছর ধরে বাঙালির সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রতীক লাল সবুজ পতাকা। পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে নিজের অধিকার আর অস্তিত্বকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরে বাঙালি। স্বাধীনতার এত বছর পরে পতাকার মর্যাদা রক্ষায় নতুন জাগরণ প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।
পতাকা. একটি জাতি রাষ্ট্রের মুক্তি ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক, স্বাধীনতার সর্বোচ্চ অহংকার। যা অর্জনের জন্য যুগে যুগে শত্রুর তরবারির সামনে মাথা পেতে দিয়েছেন দেশপ্রেমিক অকুতোভয় মানুষ। প্রাণপণে লড়েছেন, করেছেন আত্মদান।

২রা মার্চ ১৯৭১। এই দিনেই পূর্ব পাকিস্তানের ভূখণ্ডে উত্তোলন করা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর শোষণ আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে তৎকালীন ডাকসু নেতাদের উদ্যোগে, সাড়া দিয়েছিলেন আমজনতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে উত্তোলন করা হয় মানচিত্র খচিত লাল সবুজের পতাকা।

পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সেদিন বীজ বোনা হয়েছিল- স্বাধীন বাংলার । অন্যদিকে রচিত হয় উপনিবেশিক পাকিস্তান রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক মৃত্যুপরোয়ানা। দিনটি তাই বাঙালি জাতির জীবনে ঐতিহাসিক। এ দিন বাঙালি জাতি তার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পতাকা উড়তে দেখল, জমিনের ওপরে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 shadinota.net
Design & Development By Hostitbd.Com