জরুরী কাজ শেষে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে খুলনা থেকে ঈশ্বরদী যাচ্ছি, সংগে ডিআরএম, ডিটিও রয়েছেন । খুলনা থেকে কোটচাঁদপুর পর্যন্ত ট্রনটি ঘুরে ঘুরে দেখলাম। যশোর অফিসগামী বেশ কিছু কর্মকর্তা পেলাম যারা টিকেট কাটেননি। জিজ্ঞেস করলে জানালেন কাউন্টারে টিকেট পাইনি। প্রকৃত পক্ষে খুলনা কাউন্টারে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে শেষ ব্যক্তিকে টিকেট দিয়েছি। আসলে এদের অধিকাংশই টিকেট কাটেননা, ধরা পড়লে কাটেন। কারো কারো স্টাফদের সংগে খুবই খাতির, একজন যাত্রী আমাকে তার রেলের বন্ধুকে চেনানোর বহু চেস্টা করলেন, না চেনায় বড়ই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন এবং আমাকেই ভূয়া রেল কর্মকর্তা কিনা সন্দেহ প্রকাশ করলেন। বেশ কিছু আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্য পেলাম যারা টিকেট কাটেননি এবং তাঁরা কথাবার্তায় বেশ ডেসপারেট এবং টিকিট না কাটার পক্ষে নানা যুক্তি দেখাচ্ছিলেন। তাঁদের অযৌক্তিক কথা শুনে আমি খুবই বিব্রত। বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। একজন স্বামী দেখলাম তার স্ত্রীসহ সেলফি তোলার খুব চেস্টা করছেন। কিন্তু সুবিধা করতে পারছেন না, মোবাইল টা পড়ে যাচ্ছিল। আমি এগিয়ে গিয়ে তাঁদের ছবি তুলে দেবার প্রস্তাব দিলে সাগ্ৰহে রাজী হয়ে গেলেন। আমি তাদের ছবি তুলে দিলাম, অনেক ধন্যবাদ জানালেন, নাতিকে দেখতে চুয়াডাঙগা যাচ্ছেন। হঠাৎ একটি মেয়ে দেখলাম, গভীর মনোযোগের সাথে একটি বই পড়ছে। বই ইদানীং কেউ পড়ে না। তাই খুব ভালো লাগলো। কি ধরনের বই পড়ছো মা ? জিজ্ঞেস করতেই এক গাল হেসে বললো,” জীবনে কিভাবে সুখী হওয়া যায় সে বিষয়ে পড়ছি?” এখন সে সুখী, তবে ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে। আমি তাকে শুক্রিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি গ্ৰহনের অনুরোধ করলাম, তাহলে জীবন বদলে যাবে। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী দেখলাম Kotlerএর বই পড়ছে, ম্যানেজম্যান্টের ছাত্রী। মোটিভেশন ও তার প্রক্রিয়া নিয়ে খুচরা আলাপ হলো, মেয়েটি পড়াশুনায় ভালো। এক মেয়ের কান্না শুনে দৌড়ে এলাম। তাঁর মোবাইল, ৭০০০ টাকা ও পাসপোর্টের ডকুমেন্ট ব্যাগ থেকে খোয়া গেছে। তাঁর (নূরজাহান)অবস্থা দেখে ট্রেনের মধ্যে ঘোষনা দিলাম ও পুরস্কারের ঘোষনা দিলাম। কোন সহৃদয় চোর ভাই যদি দয়া পরবশ হয়ে মোবাইল টা ফেরত দিতেন তাহলে এ কৃষকের মেয়েটার খুবই ভালো হতো। মেয়েকে আধা ঘন্টা বুঝালাম, এর চাইতেও যদি খারাপ কিছু হতো তাহলে কি করতে? রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টার্স করছে। তাঁকে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাসহ ক্যাম্পাসে যাওয়ার ব্যবস্থা করলাম। লক্ষ্মী মেয়ে। আমার পেজের কয়েকজন অনুসারীর সাথে দেখা। ছবি উঠতে ভুললাম না। আজকে অনেক শিশুর সাথে আলাপ হলো। এক শিশুর বড় সাইজের টেডি বিয়ার ধরতে গিয়ে শিশুর আক্রমনের শিকার হবার উপক্রম হলাম। সব দিতে পারে এটা দেয়া যাবে না। আবার অন্য দুই শিশুর( মারিয়াম ও আবদুল্লাহ) সাথে আলাপ হলো এরা যা চাই তাই দিয়ে দিতে চাইলো। অন্যরা মায়ের কোলে বসে খোস গল্প করছিল। কোটচাঁদপুর পর্যন্ত মোট ৮০ জন টিকেট বিহীন যাত্রী পেলাম, জরিমানা সহ ভাড়া বাবদ আদায় হলো ১২৮১০ টাকা।
Leave a Reply