1. admin@kishorganjeralo.com : kishorganjeralo.com :
  2. admin@shadinota.net : shadinota net : shadinota net
ব্রেকিং নিউজ :

এশিয়ার প্রতি ন্যাটোর এত আগ্রহ কেন

  • আপডেট সময় : বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩
  • ৮৫ বার পঠিত

গত ১১ ও ১২ জুলাই লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে হয়ে গেল ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন। পশ্চিমাদের এই সামরিক জোট ইউক্রেনকে কবে নাগাদ সদস্য পদ দেবে, তা নিয়েই মূলত সম্মেলনে বসেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সূচি দিতে পারেনি ন্যাটো। ফলে ভীষণ হতাশ হয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

মুদ্রার এই পিঠের উল্টো দিকে আরেকটি গল্পও রয়েছে। সেটি হচ্ছে, নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অ্যালায়েন্স (ন্যাটো) ধীরে ধীরে এশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কোনো কোনো বিশ্লেষক ন্যাটোর এই ঝুঁকে পড়াকে ‌‘থাবা’ হিসেবে দেখছেন এবং সরাসরিই বলছেন, ন্যাটো এবার এশিয়ার দিকে তার থাবা বিস্তার করছে। উদ্দেশ্য কী ন্যাটোর? এর একটা উদ্দেশ্য হতে পারে, চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তিকে মোকাবিলা করা।

প্রখ্যাত মার্কিন সাময়িকী টাইম জানিয়েছে, ন্যাটো যে এশিয়ার প্রতি অতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে, তার প্রমাণ হচ্ছে, সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে সদ্য সমাপ্ত শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ন্যাটো। ঘটনাটি এবরাই প্রথম ঘটল, তা নয়। গত বছরও ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন আমন্ত্রণ পেয়েছিল দেশ দুটি।

আরও লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, সাম্প্রতিক শীর্ষ সম্মেলনে ন্যাটোর সঙ্গে পাঁচ পৃষ্ঠার চুক্তি করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। চুক্তিতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার, যৌথ মহড়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের অংশীদারত্ব কর্মসূচি রয়েছে।

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক ডিফেন্স প্রায়োরিটিসের সম্মানিত ফেলো ও ব্রিটিশ সাপ্তাহিক সাময়িকী দ্য স্পেক্টেটরের কলাম লেখক ড্যানিয়েল আর ডিপেট্রিস বলেন, এশিয়াকে নিজেদের চৌহদ্দির মধ্যে আনতে ন্যাটো এক ধরনের সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

একই ধরনের মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্ক সিটি কলেজের ইমেরিটাস অধ্যাপক রাজন মেনন। তিনি বলেছেন, ন্যাটোর নীতিনির্ধারকদের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে, তারা এশিয়ায় নিজেদের উপস্থিতি বাড়াতে চাচ্ছে।

ন্যাটোর পক্ষ থেকে এখনো এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা যদি সত্যি হয়, অর্থাৎ ন্যাটোর এশিয়া-প্যাসিফিক মিশন সত্যি হয়, তবে তা নানা কারণেই উল্লেখযোগ্য একটা ঘটনা হবে।

মনে রাখা দরকার, ন্যাটো জোট গঠিত হয়েছিল ১৯৪৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে। তখন ন্যাটোর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত সম্প্রসারণের হুমকি থেকে ইউরোপ ও আমেরিকাকে রক্ষা করা।

তবে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ন্যাটোর উদ্দেশ্য স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তিত হয়েছে। জোটটি পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত তার থাবা বিস্তার করে এবং শক্তিমত্তার দিক থেকে সোভিয়েত যুগের চেয়ে দ্বিগুণ আকার ধারণ করেছে।

ন্যাটোর এখনকার উদ্দেশ্য পরিষ্কার। জোটটি চায় তার ভূরাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলোর কবর খুঁড়তে। এ জন্য খুবই যৌক্তিক কারণে সে ইউরোপের বাইরে লিবিয়া, আফগানিস্তান ও ইরাকের মতো দেশগুলোর দিকে শ্যেন দৃষ্টি দিয়েছে।

কিন্তু গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যখন রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে, তখন ন্যাটো নড়েচড়ে বসে। জোটটি তাদের উদ্দেশ্য পুনর্বাস্তবায়নে মন দেয়। ন্যাটোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখন ইউরোপের সদস্য দেশগুলোর নিরাপত্তা রক্ষা করা। এ কারণেই গত সপ্তাহে ন্যাটো নতুন প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে। বলা হচ্ছে, স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর ন্যাটো প্রথমবারের মতো এ ধরনের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার অনুমোদন দিল। বলার অপেক্ষা রাখে না, ন্যাটো এখন প্রথমত নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে ঠেকাতে চায়, দ্বিতীয়ত চীনকে ঠেকাতে চায় এবং তৃতীয়ত চীনকে ঠেকাতে চায়।

কাজটি ন্যাটোর জন্য কতটা সহজ হবে, তা নিয়েই এখন আলোচনা চলছে বিশ্লেষকদের মধ্যে। কারণ, চীন ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। দেশটি বলেছে, পশ্চিমারা এ অঞ্চলে কোনো সামরিক অবস্থান তৈরির চেষ্টা করলে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।

চীন কেন এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাল, তা ন্যাটোর বিবৃতিতে চোখ বোলালেই বোঝা যাবে। গত মঙ্গলবার শীর্ষ সম্মেলন শেষে দেওয়া বিবৃতিতে ন্যাটো বলে, ‘রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে চীন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে তার প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। কিন্তু এর মাধ্যমে আসলে বেইজিং কী চায়, তা এখনো আমাদের কাছে অস্পষ্ট। গত কয়েক বছর ধরে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী, বিদ্বেষপরায়ণ ও জবরদস্তিমূলক বিভিন্ন নীতির শিকারে পরিণত হচ্ছে। চীনের এই প্রভাব নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে তা একসময় জোটের ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠবে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে চীন এবং রাশিয়া নিজেদের কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও গভীর পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই দুই দেশের মৈত্রী অদূর ভবিষ্যতে আইনভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থাকে গভীর সংকটে ফেলবে। দুই রাষ্ট্রের গভীর মৈত্রী যে ইতোমধ্যে আইনভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো- নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন ইউক্রেনে আগ্রাসন চালোনোর জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা কোনো নিন্দা প্রস্তাবে এখন পর্যন্ত ভোট দেয়নি।

ন্যাটোর এই বিবৃতির কয়েক ঘণ্টা পরই পাল্টা বিবৃতি দেয় ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চীনা দূতাবাস। সেই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ন্যাটো এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রবেশ করতে চাইছে। আমরা দৃঢ়ভাবে আপত্তি জানিয়ে বলতে চাই, যদি চীনের জাতীয় স্বার্থ ও বৈধ অধিকারগুলোয় হস্তক্ষেপের কোনো চেষ্টা কেউ করে, সে ক্ষেত্রে শক্তভাবে তা প্রতিরোধ করতে বেইজিং প্রস্তুত।’

সুতরাং এশিয়া অঞ্চলে ন্যাটোর আধিপত্য বিস্তার খুব একটা সহজ হবে না বলেই মনে হচ্ছে। তারপরও জাপানের রাজধানী টোকিওতে ন্যাটোর কার্যালয় খোলার উদ্যোগ নিয়েছেন ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ। এ নিয়ে ন্যাটোর সদস্যদের মধ্যেই মতবিরোধ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা। কাতারভিত্তিক এই গণমাধ্যম তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, টোকিওতে ন্যাটোর কার্যালয় স্থাপন করাকে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।

তবে ন্যাটোর অন্য সদস্যরা এশিয়া অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য ন্যাটোর উপস্থিতি জরুরি বলে মত দিয়েছে। তারা বলছে, এশিয়ার প্রতিবেশি দেশগুলোতে চীনের আধিপত্য জোরদার ও সামরিক আধুনিকীকরণ নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। ওয়াশিংটনের কাছ থেকে পরাশক্তির খেতাব কেড়ে নিতে চায় চীন। সুতরাং এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ চীন। আর চীনকে মোকাবিলা করার জন্য এশিয়ায় ন্যাটোর সম্প্রসারণ বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 shadinota.net
Design & Development By Hostitbd.Com