মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সফর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের আরেকটি সুযোগ হতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। যদিও তারা মনে করেন, চীনের মধ্যস্থতায় ঢাকা ও নেপিদোর মধ্যে সমঝোতা স্থাপন এবং যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো ভূমিকায় পৌঁছাতে আরও কৌশলী হতে হবে বাংলাদেশকে।
রাখাইনে গণহত্যার স্বীকৃতির ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক আদালতে করা মামলার পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আবারও ইস্যুটি তুলে ধরতে ঢাকাকে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
সাড়ে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ বহন করে চলেছে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে গণহত্যার শিকার হয়ে পালিয়ে আসা সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা। এ বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর ভরণপোষণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এগিয়ে এলেও ক্রমেই কমছে তার তহবিল। এতে চাপ বাড়ছে ঢাকার ওপর।
এদিকে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ২০১৮ সালে স্বাক্ষর হওয়া চুক্তি এখন পর্যন্ত কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ। রাখাইনে নিরাপদ ঘরবাড়ি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রস্তুত, ঢাকা-নেপিদো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক, মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের কক্সবাজার শিবির পরিদর্শন একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরাতে পারেনি নিজ দেশে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ
রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতাকে ২০২২ সালের মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণহত্যা হিসেবে ঘোষণা করলেও, দৃশ্যত কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেয়নি দেশটি। বরং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশটির সঙ্গে তারা বাণিজ্য আরও বাড়িয়েছে।
এমন এক প্রেক্ষাপটে ঢাকা সফরে এসেছেন বেসামরিক, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনেও যাওয়ার কথা।
সাবেক কূটনীতিক ও পররাষ্ট্র সচিব অধ্যাপক শহীদুল হকের মতে, নেপিদোর নিস্ক্রিয় মনোভাব সচল করতে শক্তিধর বন্ধুরাষ্ট্রকে আরও সম্পৃক্ত করতে হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার চায় এটা স্থগিত হয়ে যাক। এটা নিয়ে কেউ কথা না বলুক, সবাই এটা ভুলে যাক। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো। রোহিঙ্গা ইস্যুকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, সব সময় কথা বলতে হবে। নতুন নতুন অপশন খুঁজতে হবে কীভাবে সমাধান করা যায়।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তিধর দেশের ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতাকে মাথায় নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা অনুযায়ী সক্রিয় পদক্ষেপের দিকে আলোচনা এগিয়ে নিতে হবে ঢাকাকে।
এছাড়া ঢাকা-ওয়াশিংটন কূটনীতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গকে প্রাধান্য দেয়ারও পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
Leave a Reply