ইউক্রেনে ১৬ মাস ধরে চলা যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়া এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে যার জের ধরে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ক্ষমতাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন তাদের ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনে বলেছেন সশস্ত্র বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে মি. প্রিগোশিন “আমাদের দেশের পিঠে ছুরি মেরেছে।”
কিন্তু রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যক্তি ইয়েভগেনি প্রিগোশিন বলেছেন তার লক্ষ্য “সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো নয়, বরং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।”
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে গত কয়েক মাস ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন মি. প্রিগোশিন। ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপের জন্য তিনি হাজার হাজার সৈন্য নিয়োগ করেছেন, যাদেরকে মূলত বিভিন্ন রুশ কারাগার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে গত কয়েক মাস ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন মি. প্রিগোশিন। ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপের জন্য তিনি হাজার হাজার সৈন্য নিয়োগ করেছেন, যাদেরকে মূলত বিভিন্ন রুশ কারাগার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
ইউক্রেনে যেভাবে যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছে তা নিয়ে মি. প্রিগোশিনের সঙ্গে রুশ সামরিক বাহিনীর সামরিক নেতাদের প্রকাশ্যে মতবিরোধ চলছে দীর্ঘ সময় ধরে। সেই বিরোধ এখন বিদ্রোহে রূপ নিয়েছে।
ওয়াগনার বাহিনীর সৈন্যরা তাদের দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল থেকে সীমান্ত পার হয়ে চলে এসেছে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় বৃহৎ শহর রোস্তভ-অন-ডনে। এই বাহিনী দাবি করছে যে তারা শহরের সব সামরিক স্থাপনা দখল করে নিয়েছে।
এই শহরটি ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ৬০ মাইল দূরে। এখানেই রয়েছে ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর কমান্ড সেন্টার। এই শহরটি রুশ সেনাবাহিনীর ‘রসদ সরবরাহের কেন্দ্র’ হিসেবেও পরিচিত।
সামরিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন রোস্তভে সামরিক বাহিনীর ভেতরে কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে ইউক্রেন যুদ্ধের ওপরেও।
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন পরিস্থিতি বেশ কঠিন, তবে রাশিয়াকে রক্ষা করার জন্য তিনি সম্ভাব্য সব কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ছবির উৎস,REUTERS
ইয়েভগেনি প্রিগোশিন তার বিরুদ্ধে আনা সব ধরনের সামরিক অভ্যুত্থানের অভিযোগকে অবাস্তব বলে উল্লেখ করেছেন।
রুশ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ওয়াগানার গ্রুপের প্রধানের এই বিরোধ তৈরি হয়েছে বেশ আগে থেকেই।
ইয়েভগেনি প্রিগোশিন অভিযোগ করে আসছিলেন যে রাশিয়ার সামরিক নেতারা তার ভাড়াটে সৈন্যদের যুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট অস্ত্রশস্ত্র দিচ্ছে না।
তার সেই অভিযোগ এখন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমোভের বিরুদ্ধে সরাসরি চ্যালেঞ্জে রূপ নিয়েছে। মূলত এই দুই সামরিক নেতা ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ পরিচালনা করছেন।
এখনও পর্যন্ত এটাকে সামরিক অভ্যুত্থান বলে মনে হচ্ছে না। কারণ সরকারের ভেতর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো পক্ষ ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেনি। কিন্তু এটা রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় সামরিক ব্যক্তিদেরকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা এবং এই হিসেবে এই সশস্ত্র বিদ্রোহ প্রেসিডেন্ট পুতিনের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।
ওয়াগনার বাহিনীর সৈন্যরা রাজধানীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর গোটা মস্কো অঞ্চলে “সন্ত্রাস-বিরোধী” বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। এছাড়াও পূর্বনির্ধারিত সবধরনের বড় বড় অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
“আমাদের ২৫,০০০ সৈন্য আছে,” প্রিগোশিন দাবি করেছেন। “কেউ চাইলে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে।”
এই ঘোষণা প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্য হুমকি তৈরি না করলেও এটা সামরিক নেতৃত্বের জন্য বড় রকমের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সীমান্ত অতিক্রম করে তার সৈন্যরা রোস্তভ শহরে প্রবেশ করেছে। দৃশ্যত মনে হচ্ছে তার বাহিনী শহরের সামরিক সদরদপ্তর ঘিরে ফেলেছে। এখান থেকেই ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছে। এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেখান থেকে পালিয়ে গেছেন।
আরেকটি খবরে জানা যাচ্ছে যে ওয়াগনার বাহিনীর যোদ্ধারা রোস্তভ ও মস্কোর মধ্যবর্তী একটি শহর ভরোনেজের সামরিক স্থাপনাও দখল করে নিয়েছে।
ইয়েভগেনি প্রিগোশিন প্রেসিডেন্ট পুতিনের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং মি. পুতিনের অধীনেই তার উত্থান ঘটেছে- প্রথমে একজন বিত্তশালী ব্যবসায়ী এবং তার পরেই তিনি এই ভাড়াটে বাহিনীর প্রধান হয়েছেন।
ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় বাখমুত শহর দখলের লড়াইয়ে ওয়াগনার গ্রুপের বহু যোদ্ধা নিহত হয়েছে। কয়েক মাস ধরে সেখানে তীব্র যুদ্ধ চলার পরেও ওই এলাকা পুরোপুরি দখল করে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
প্রিগোশিন প্রায়শই রুশ সামরিক নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন। বলেছেন তার বাহিনীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয়নি।
সোশাল মিডিয়াতে তিনি মাঝে মধ্যেই ভিডিওসহ বক্তব্য পোস্ট করেছেন যাতে ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক ব্যর্থতা ও বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
Leave a Reply