রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি এবং সিলেটে ৪৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এর আগে বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল চারটায় শেষ হয় ভোটগ্রহণ।
তবে চারটার ভেতর যেসব ভোটার কেন্দ্রে প্রবেশ করেন তাদের ভোট নেওয়া হয়। এরপর শুরু হয়েছে ভোট গণনা।
সকালে কেন্দ্রে ভোটার কম থাকলেও দুপুরের দিকে বাড়ে উপস্থিতি। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সিলেটে ১৯০টি কেন্দ্রের সবকটিতেই সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। রাজশাহীর ১৫৫টি কেন্দ্রে ১ হাজার ২০০ সিসি ক্যামেরা বসায় নির্বাচন কমিশন।
আগের তিন সিটি ভোটের মতোই এই দুই সিটি নির্বাচনেও নেই বিএনপির কোনো প্রার্থী। বরিশালে দলের মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ এনে আগেই এই দুই সিটি ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় ইসলামী আন্দোলন।
এর আগের তিনটি সিটি ভোটেই বড় কোনো গোলযোগ হয়নি। ভোট ছিল বেশ শান্তিপূর্ন। এর মধ্যে একটিতে স্বতন্ত্র এবং বাকি দুটিতে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগেরগুলোর ধারাবাহিকতায় এই দুই সিটিতেও শান্তিপূর্ন ভোট হবে বলে জানায় নির্বাচন কমিশন।
সিটি ভোট সামনে রেখে রাজশাহী নগরীতে মোতায়েন করা হয় প্রায় ৬ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।
রাজশাহী সিটির ১৫৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮ টিকে গুরুত্বপূর্ন ও ৭ টিকে সাধারণ বলে চিহ্নিত করা হয়। ভোট সুষ্ঠু করতে প্রিসাইডিং অফিসারসহ ৩ হাজার ৬১৪ নির্বাচনি কর্মকর্তা মাঠে ছিলেন।
রাজশাহীতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৪ জন। এরা হলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল নিয়ে মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন ও জাকের পার্টির গোলাপফুল নিয়ে মো. লতিফ আনোয়ার। দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন বর্জন করেছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. মুরশিদ আলম।
এছাড়া নগরীর ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১১ জন আর ১০টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৪৬ জন।
নগরীতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন, নারী ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন আর হিজড়া আছেন ৬ জন।
১৯৮৭ সালে যাত্রা শুরু করা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আগের তিনটি ভোটেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এর মধ্যে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের ভোটে তিনি মেয়র হন। ২০১৩ সালের ভোটে বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন লিটন।
এদিকে সিলেটের সিটি নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে নগরীতে মোতায়েন করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৫ হাজার সদস্য।
সিলেটে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে লড়ছেন মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল নিয়ে নজরুল ইসলাম বাবুল এবং জাকের পার্টির গোলাপফুল নিয়ে মাঠে আছেন মো. জহিরুল আলম। দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন বর্জন করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীকে আছেন মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু, ক্রিকেট ব্যাট প্রতীকে মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, বাস প্রতীকে মো. শাহ জাহান মিয়া এবং হরিণ প্রতীকে মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।
৪২টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৭২ জন। আর ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৮৭ জন।
নগরীতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬০ জন এবং নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৭ জন এবং হিজড়া ৬ জন।
২০০২ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর সিলেটে ভোট হয়েছে চারবার। এর মধ্যে দুবার আওয়ামী লীগ এবং দুবার বিএনপির প্রার্থীরা জয় পান।
২০০৩ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন কামরান আর ২০১৩ ও ২০১৮ সালে মেয়র হন বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী। এবার বিএনপি ভোট বর্জন করায় আর প্রার্থী হননি আরিফুল। আর বদর উদ্দিন কামরানের মৃত্যুর পর এবার আওয়ামী লীগ মনোনয়ন পেয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
Leave a Reply