বাংলাদেশের জন্য নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর রাজনীতির প্রধান আলোচনা এখন কূটনীতি। রাজনৈতিক দলগুলো দেশের পরবর্তী কূটনৈতিক পদক্ষেপ সম্পর্কে যেমন কৌতূহলী তেমনি দূতাবাসগুলোও এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে আগ্রহী।
দূতাবাসগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ যেমন বাড়ছে তেমনি দূতাবাসগুলো রাজনৈতিক নেতা ছাড়াও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ বাড়িয়েছে। সরাসরি ও অনলাইন দুইভাবেই এই যোগাযোগ বাড়ছে।
জানা গেছে, এই যোগোযোগের দিক দিয়ে অ্যামেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার কয়েকটি দেশ প্রাধান্য পাচ্ছে। যোগাযোগের মাধ্যমে দুই পক্ষই সর্বশেষ আপডেট এবং মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একই অবস্থানে আছে। মার্কিন ভিসা নীতির পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে ২০২৬ সালের পর জি-প্লাস সুবিধা পেতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের শর্তের কথা বলেছে। অন্য দিতে এশিয়ার কয়েকটি দেশ পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
মঙ্গলবার ইউরোপের একটি দেশের দূতাবাসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের প্রায় ঘন্টব্যাপী অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এ বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। তার কথায় স্পষ্ট যে এবার নির্বাচনের পরিস্থিতি বুঝতে নির্বাচনী পর্যবেক্ষদের ওপর জোর দেওয়া হবে। তারা বাংলাদেশে নির্বাচনের আগেই কাজ শুরু করবেন। তার আগে দূতাবাসগুলো নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতে চাইছে। নতুন মার্কিন ভিসা নীতি নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে তাও জানতে চাইছে। বুঝতে চাইছে নির্বাচন কমিশন তা কতটা আমলে নেবে ।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আগের দিন মার্কিন ভিসা নীতির ব্যাপারে টুইট করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিদেশি কূটনীতিকেরা মনে করেন, গাজীপুরের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। তারা বাকি চারটি সিটি নির্বাচনের ব্যাপারেও আগ্রহী। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফলের সঙ্গে ভিসা নীতির কোনো যোগসূত্র আছে, না তা কেবল কাকতালীয় তারা বোঝার চেষ্টা করছেন।
ডয়চে ভেলের প্রতিনিধির সঙ্গে এশীয় একটি দেশের দূতাবাসের একজন কর্মকর্তার সঙ্গেও সরাসরি আলোচনা হয়েছে। তারা বাংলাদেশের নির্বাচন সংক্রান্ত ঘটনাগুলো সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা বুঝতে চাইছেন পরিস্থিতি কোনদিকে যায়। সবারই একটি বিষয়ে আগ্রহ আর তা হলো রাজনৈতিক সহিংসতা বাংলাদেশ এড়াতে পারবে কী না। আর বিএনপি বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচনে অংশ নেবে কী না।
ঢাকায় বিশিষ্ট নাগরিকদের একজন এরইমধ্যে অ্যামেরিকা ও ইউরোপের তিনটি দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, তিনটি দূতবাসের কর্মকর্তারাই প্রধানত এখন বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তারা বড় দুই রাজনৈতিক দল ছাড়াও আরো কয়েকটি রাজনৈতিবক দলের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানিক আলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আলাপে দুই পক্ষেরই আগ্রহ আছে।
মার্কিন ভিসা নীতি প্রকাশ্যে আসার পর দিন আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিরা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পর পিটার হাস পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের সঙ্গে তার অফিসে দেখা করেন। দুইটি বৈঠকেই বিষয় ছিলো ভিসা নীতি নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র এর লক্ষ্য একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলে জানানো হয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মো, হুমায়ুন কবির বলেন, “যোগাযোগের বিষয়টি তো প্রকাশ্যেই আমার দেখতে পাচ্ছি। ভিতরে নিশ্চয়ই এই যোগাযোগ আরো হচ্ছে। আমরা মনে হয় সামনে এই যোগাযোগ আরো বাড়বে। আমাদের অভ্যন্তরীণ বা নিজস্ব প্রক্রিয়া যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা সক্ষমতা হারায় তখনই এই ধরনের কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। এটা কতটুকু কাজে আসবে জানি না তবে সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে তারা চেষ্টা করছে।”
সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট৷ এই নির্বাচনে অংশ না নেয়াকে অনেকেই রাজনৈতিক ভুল বলে মনে করেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে থাকা নানা মামলার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দেয়৷ আরো কয়েকটি মামলা চলছে তাঁর বিরুদ্ধে৷
বিদেশে তারেক রহমান
মানি লন্ডারিংসহ নানা মামলায় বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন জিয়াপুত্র ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ নানা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না৷ এসব সংকট নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল অবস্থায় আছে বলে মনে করেন অনেকেই৷
Leave a Reply