দেশে বজ্রপাতে বছরে গড়ে মৃত্যু হয় ২৬৫ জনের। গত ১২ বছরে এতে তিন হাজারের বেশি প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়।
দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় মে মাসে। এ সময় প্রায় ৩২ লাখ বার দেখা যায় বজ্র-বিদ্যুতের ঝলক। আর বেশি ঝুঁকি রাত ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে বজ্রপাতে ২০২২ সালে মারা গেছেন ২৭৪ জন। তার আগের বছর, ২০২১ সালে মারা গেছেন ৩৬৩ জন, আর ২০২০ সালে মারা গেছেন ২৩৬ জন। এর আগে ২০১৯ সালে মারা গেছেন ১৬৮ জন। আর ২০১৮ সালে মারা গেছেন ৩৫৯ জন। তার আগের বছর, ২০১৭ সালে মারা গেছেন ৩০১ জন।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, সম্প্রতি বজ্রপাত-প্রবণ জেলার সংখ্যা বাড়ছে। প্রাণহানি কমাতে তৈরি করতে হবে এলাকাভিত্তিক সচেতনতা।
তীব্র তাপ প্রবাহের পর স্বস্তির বৃষ্টির সঙ্গে আতঙ্ক হয়ে এসেছে বজ্রপাত। এপ্রিলের শেষে দেশের পূর্বাঞ্চলে বজ্রপাতে প্রাণ যায় ১৩ জনের। বজ্রপাতে মৃতদের ৭০ ভাগই খোলা মাঠে কাজ করা কৃষক। গোসল ও মাছ ধরার সময় মৃত্যু হয় ১৩ শতাংশের।
সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের গবেষণায়, বজ্রপাত বাড়ার বড় কারণ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও উঁচু গাছ কেটে ফেলা। কোথাও এক ডিগ্রি উষ্ণতা বাড়লে বজ্রপাত বাড়ে ১২ শতাংশ।
বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ে পূর্বাভাস দিয়ে প্রাণহানি কমানো গেলেও বজ্রপাতে সে সুযোগ নেই। মার্চ থেকে মে এই তিন মাসেই হয় প্রায় ৫৯ শতাংশ বজ্রপাত। আর বর্ষায় জুন থেকে সেপ্টেম্বরে ৩৬ শতাংশ। তবে মোট বজ্রপাতের ৭০ ভাগই হয় এপ্রিল, মে ও জুনে।
মৌসুমি বায়ু দেশের আকাশে আসার আগের দুই মাস এপ্রিল ও মে-তে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে এর প্রকোপ থাকে বেশি। বর্ষায় তীব্রতা বাড়ে সুনামগঞ্জসহ রাঙামাটি-চট্টগ্রামে। শীতে বেশি আক্রান্ত হয় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটে।
সম্প্রতি বজ্রপাত কবলিত জেলার সংখ্যা বাড়ছে বলে জানাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.আশরাফ দেওয়ান।
ড.আশরাফ দেওয়ান জানিয়েছেন, দেশে বছরে বজ্রপাত হয় ৮০ থেকে ১২০ দিন। উন্নত দেশগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ও সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে প্রাণহানি কমাতে পারলেও, তা সম্ভব হয়নি দেশে। বিশ্বে মিনিটে বজ্রপাত হয় ৮০ লাখ বার। সবচেয়ে বেশি প্রকোপ ভেনেজুয়েলার মারাকাইবো হ্রদে। এ থেকে বাঁচার সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কিন পদ্ধতির নাম থার্টি সেকেন্ড টু থার্টি মিনিটস।
দেশের আকাশে দেখা মেলে তিন ধরনের বজ্রবিদ্যুতের। এর সবগুলো ভূ-পৃষ্ঠে না পড়লেও প্রাণহানি এড়াতে উঁচু স্থান, জলাশয় ও খোলা জায়গা এড়িয়ে চলতে বলছেন গবেষকেরা।
Leave a Reply