এই বইমেলা আসলেই ভাষার গুরুত্ব ও মহিমা ফুটে ওঠে। বাংলা ভাষা মধুর ভাষা। এই ভাষার মাধুর্য এতটাই সুমধুর যে, যেখানে আলাদা সুর ও ছন্দ পাওয়া যায়। এনে দেয় অন্যরকম এক প্রশান্তি। যে প্রশান্তি যে কোনো ভাষার চেয়ে একটু আলাদা, একটু অন্যরকম। অন্তত বাঙালিদের কাছে। আর তাইতো এই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে এ দেশের মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সাহিত্যের আলাদা একটা মাধুর্য আছে। আমাদের দেশের নদী-নালা, খাল-বিল, বন, পাখির ডাক সবকিছুর মধ্যেই আলাদা একটা সুর আছে, ছন্দ আছে। যে সুর ও ছন্দ আমাদের ভাষার সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়। তাই তরুণ প্রজন্মকে শিল্প-সাহিত্যে আগ্রহী করে তুলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মকে যত বেশি সাহিত্যের দিকে আনতে পারব, খেলাধুলা ও সংস্কৃতির দিকে আনা যাবে, তারা ততটা সৃজনশীল হবে। সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা যত বাড়বে, নতুন প্রজন্ম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে তত দূরে থাকবে। বাংলা ভাষাকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করাতে অনুবাদ সাহিত্যে জোর দিতে হবে। এতে বিদেশিরা বাংলা ভাষা সম্পর্কে আরও জানতে পারবে।’
নতুন প্রজন্মকে বই পড়ায় আগ্রহী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন সবাই বই পড়তে চায় না, তাই অডিওর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। দেশের প্রত্যেকটা সাহিত্যকর্ম অডিও ভার্সন করে দিলে আরও বেশি পাঠক তৈরি হবে। তরুণ প্রজন্ম অডিও শুনতেই বেশি অভ্যস্ত। তবে, কাগজের বইয়ের অনুভূতিই অন্য রকম এবং বই পড়ার তৃপ্তিটাই আলাদা। এই তৃপ্তিটা আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে আমাদের অনুবাদে জোর দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনুবাদের ব্যাপারে আমি বলব, বছরে একটা দুইটা বই অনুবাদ হবে- তা নয়। বাংলা সাহিত্যের যত বই বের হবে, সবগুলো বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করতে হবে। বিদেশিরা আমাদের ভাষা সম্পর্কে আরও জানতে পারুক সেটাই আমরা চাই। তাহলেই সারাবিশ্ব আমাদের কথা জানতে পারবে। এক্ষেত্রে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মূল ভূমিকা নিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমি প্রতিবার জাতিসংঘে মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ দেই। যে ভাষার জন্য আমাদের ছেলেমেয়েরা রক্ত দিয়ে গেছে, সে ভাষার সম্মান রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা একবার আন্তর্জাতিক সাহিত্য মেলা আয়োজন করেছিলেন। আমি মনে করি, এ রকম বিশেষ সাহিত্য মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেবে বাংলা একাডেমি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলা ভাষা মধুর ভাষা। রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়া যাবে না, বলা হলো। অথচ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাদ দিয়ে কিভাবে বাংলা সাহিত্য হবে? সেখানেও আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে। এমনকি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায়ও একটা মুসলমানি ভাব দেয়ার চেষ্টা করা হলো, সেটাও আমরা মোকাবিলা করলাম। আমরা আমাদের ভাষা ও সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।’
বাংলা ভাষায় মামলার রায় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কথা ধরেন, আমি ইংরেজি জানি না, কী করব। জজ সাহেব রায় দিয়ে দিল, কিন্তু রায়টা কী দিল বুঝলাম না। এজন্য এখন থেকে বাংলা ভাষায় রায় দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, সারা দেশে কালচারাল সেন্টার করা হয়েছে। আমরা জেলায় জেলায় বইমেলা করছি। এভাবে আমাদের বিভিন্ন দেশেও বইমেলা করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। কূটনীতিকদের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থাটা করা প্রয়োজন। এতে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
Leave a Reply