রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার বেশ কয়েকটি সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করে বাইডেন প্রশাসন। সে তালিকায় নাম ছিল রাশিয়ার এই জাহাজ সংস্থারও।যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এই জাহাজকে নোঙর করতে না দিতে বাংলাদেশকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল পেন্টাগন। বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য উরসা মেজরকে পণ্য খালাস করার অনুমতি দেয়ার মধ্যদিয়ে পাশে দাঁড়াল ভারত। দিল্লির এমন ভূমিকা নজিরবিহীন, বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও বর্ষীয়ান সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক।তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে যে ‘তুমি বিপদে পড়েছো, আমি তোমাকে উদ্ধার করলাম।’ এখন আমেরিকানদের তো সবকিছু নিয়েই আপত্তি। এখন ওরা রাশিয়াকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে তারা রাশিয়ার এনার্জি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বেশি চাপ দেয়ার চেষ্টা করছে। তাছাড়া ভারতের বেশির ভাগ বড় বড় নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টও রাশিয়ার। সুতরাং এখানে যেন আমেরিকানরা নতুন করে কোনো গোলযোগ করতে না পারে, সে জন্য ভারত আগে থেকেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে।ভারতের এই সিদ্ধান্ত কূটনৈতিকভাবে এ উপমহাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেও মনে করেন এ সাংবাদিক।
সুবীর ভৌমিক বলেন, ভারত একসঙ্গে কিন্তু তিনটি ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রথমত মার্কিনিদের। দ্বিতীয়ত, রাশিয়ানদের বুঝিয়ে দেয়া যে, ‘ভাই, আমরা তোমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষা করতে ইচ্ছুক। আমরা আমাদের পলিসি অনুসারে তোমাদের থেকে তেলও কিনব, আবার তোমাদের জিনিস আরেক দেশে আসছিল, আমরা সেটিও রাস্তা করে দিচ্ছি, ট্রানজিটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
গত ১৪ নভেম্বর জাহাজটি রাশিয়ার পিটার্সবার্গ থেকে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পণ্য নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। তবে বাদ সাধে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। তাদের দাবি, স্পার্টা-৩ নামের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত রাশিয়ান জাহাজটি রং ও নাম পাল্টে চালানো হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ভারত মূলত তিনটি বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছেন ভারতীয় বিশ্লেষকরা। এক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাদাগিরি কোনোভাবেই মেনে নেবে না দিল্লি। দুই. একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের যে বন্ধুত্ব, সেই বন্ধুত্বে কোনো ধরনের চিড় ধরুক, সেটিও চায় না নয়াদিল্লি। তিন. ঐতিহাসিক ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককেও চিরজীবী করতে চাইছে দিল্লি।
Leave a Reply