ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি জানিয়েছে, দেশটির সামরিক বাহিনী তাদের চলমান বার্ষিক মহড়ার অংশ হিসেবে শনিবার ওমান উপসাগরের উপকূলীয় এলাকায় এবং কৌশলগত স্ট্রেইট অফ হরমুজ অর্থাত্ হরমুজ প্রণালীর কাছে নতুন একটি আক্রমণাত্মক ড্রোনের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।
এদিকে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে সেখানে চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওগুলিতে তেহরানের গ্র্যান্ড বাজার এবং কুর্দি অঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি শহর ও নগরে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে তেহরানের বাজারের কিছু অংশ বন্ধ হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ এই বিক্ষোভ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি আরও জানিয়েছে, আবাবিল-৫ আক্রমণকারী ড্রোনটি এই প্রথমবারের মতো যুদ্ধের মহড়ায় ব্যবহার করা হয় এবং তা সফলভাবে ৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মাইল) দূরে একটি বোমা সমেত তার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। ইরান গত এক দশকে এরকম আরও অনেকগুলি সামরিক ড্রোন পরীক্ষা করেছে।
সামরিক ড্রোনগুলি ইরানের সাথে এবং যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের মধ্যে বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। পশ্চিমাদের দাবি, তেহরান মস্কোকে ড্রোন সরবরাহ করছে, যে ড্রোনগুলি পশ্চিম-সমর্থিত ইউক্রেনে হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে।
অবশেষে গত নভেম্বরে, ইরান স্বীকার করে যে, তারা রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করেছে। তবে তারা বলেছে, ড্রোনগুলি ইউক্রেনে মস্কোর যুদ্ধের আগে পাঠানো হয়েছিল। ইরান এও বলেছে যে, তারা সংঘাত বন্ধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পারস্য উপসাগরের মুখে অবস্থিত হরমুজ প্রণালী বৈশ্বিক জ্বালানী সরবরাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পথ। সমুদ্রে বাণিজ্য করা সমস্ত জ্বালানী তেলের প্রায় এক পঞ্চমাংশ এই পথ দিয়ে যায়।
কমান্ডো এবং বায়ুবাহিত পদাতিক যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার, সামরিক পরিবহন বিমান এবং সাবমেরিনসহ “জোলফাঘর-১৪০১” নামে পরিচিত ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধ মহড়ায় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও উৎক্ষেপণ করে ইরানের সামরিক বাহিনী। ইরান তার প্রতিরক্ষা শক্তি উন্নত করতে এবং অস্ত্র পরীক্ষা করার জন্য নিয়মিত এই ধরনের মহড়ার আয়োজন করে থাকে।
গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে, সরকার বিরোধী বিক্ষোভে কাঁপছে ইরান, যা দেশটির নৈতিকতা পুলিশ কর্তৃক আটক একজন তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে প্রজ্বলিত হয়েছিল। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা দেশটির ধর্মবাদীদের শাসনের অবসানের আহ্বানে বিক্ষোভগুলি দ্রুত দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
ইরানের অস্থিরতা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে, এমন মানবাধিকার কর্মীদের মতে, দেশটিতে ৫০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন এবং ১৮,৫০০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে, নিহত বা গ্রেপ্তারদের কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি ইরানি কর্তৃপক্ষ।
Leave a Reply