বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপিপন্থি কিছু কর্মচারী প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। বহিরাগতদের নগর ভবনে অবাধে প্রবেশ করিয়ে বিভিন্ন কর্মকর্তার রুমে গিয়ে হয়রানি ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ এসেছে এসব কর্মচারীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপি সমর্থক লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার শেখ শওকত হোসেন ও পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি দল ডিএনসিসিতে এসে সহকারী সচিব জাহিদ হাসানের রুমে ঢুকে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ সময় ওই কক্ষে আগে থেকেই উপস্থিত থাকা ডিএনসিসির নিরাপত্তা কর্মকর্তা, সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা ও সহকারী ব্যবস্থাপককে (পরিবহন) হুমকি-ধমকি দিয়ে বের করে দেয় তারা।
এছাড়াও গত ২৫ আগস্ট ডিএনসিসির তথ্য কর্মকর্তা পিয়াল হাছানকেও মারধর করে নগর ভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। ওই দিনও এই কর্মকর্তাকে মারধর করেছিলেন শওকত হোসেন। সঙ্গে ছিলেন তার অনুসারী গাদ্দাফি হোসেন। তিনি জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রস্তাবিত কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। এখন আর পিয়াল হাছান অফিস করতে পারছেন না।
এসব বিষয়ে পরদিন ২৬ সেপ্টেম্বর ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলমের কাছে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়কসহ প্রায় ৬০ কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি দেওয়া হয়। হামলায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তারা।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপিপন্থি কর্মচারীরা যখন-তখন বহিরাগতদের নগর ভবনে নিয়ে আসেন। তারা বিভিন্ন ফ্লোরে গিয়ে শোডাউনের মতো ঘোরাঘুরি করেন। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য তাদের কক্ষে গিয়ে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আর সব কিছুর পেছনে লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার শেখ শওকত হোসেন ও তার অনুসারীদের দায়ী করছেন সবাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শওকত হোসেন ঢাকা উত্তর সিটির জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রস্তাবিত কমিটির সহ-সভাপতি এবং ফরহাদ হোসেন সাধারণ সম্পাদক।
সর্বশেষ ২০ অক্টোবর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সচিব (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকের রুমে একদল বহিরাগত ঢুকে তাকে কোন একটি বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করে। তাদের একজন সচিবকে উচ্চশব্দে ধমকাতে থাকে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালের কোনও এক বিষয়ে হানিফ পরিবহনের এক কর্মকর্তা এসে সচিবকে দায়ী করে উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকেন। তারা নিজেদের তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিতে থাকেন। এসময় বিএনপিপন্থি গাদ্দাফি উপস্থিত থেকে সবাইকে নিয়ে সচিবের রুমে ঢুকে দরজা আটকে দেন। এর কিছুক্ষণ পরে সবাই বেরিয়ে আসে।
এ ঘটনার ছবিও এসেছে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে। তবে ঘটনার বিষয়ে মুখ খুলছেন না সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তেমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। কাজে এসেছিল, সমাধান হয়ে গিয়েছে।
অভিযুক্ত লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার শেখ শওকত হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নগর ভবনের ভেতরে কর্মকর্তাদের লাঞ্ছনার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বরের ঘটনার তদন্ত চলছে। আর ২০ অক্টোবরের ঘটনাটি সম্পর্কে জানা নেই আমার।
Leave a Reply