জেন-জিদের নেতৃত্বে টানা এক সপ্তাহের বিক্ষোভে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে কাঠমান্ডুর মেয়র ও র্যাপার-ইঞ্জিনিয়ার থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা বালেন্দ্র শাহ। তিনি ‘বালেন’ নামেই জনপ্রিয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি উঠেছে জোরেশোরে।
সোমবার বিক্ষোভের সময় পুলিশি অভিযানে অন্তত ১৯ বিক্ষোভকারী নিহত হন। এদের মধ্যে ১৮ জনেরই মৃত্যু হয় কাঠমান্ডুতে। নিহতদের অনেকেই স্কুল ও কলেজের পোশাক পরা ছিলেন। এর আগে সরকার ফেসবুক, ইউটিউব, এক্সসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দিলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়।এই অস্থিরতার মধ্যে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বালেন্দ্র শাহ লিখেছেন, ‘এই আন্দোলন একেবারেই জেন-জিদের স্বতঃস্ফূর্ত উত্থান। আমার বয়স তাদের কাছে বেশি মনে হতে পারে। তবুও আমি তাদের আকাঙ্ক্ষা, লক্ষ্য ও চিন্তা জানতে চাই। রাজনৈতিক দল, নেতা বা কর্মীরা যেন নিজেদের স্বার্থে এই আন্দোলনকে ব্যবহার না করে।তিনি আরও বলেছেন, সরাসরি উপস্থিত না থেকেও তিনি ‘সম্পূর্ণ সমর্থন’ দিচ্ছেন তরুণদের।
সোমবার রাতে সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে অনলাইনে ‘বালেন ফর পিএম’ দ্রুত ট্রেন্ডে উঠে আসে। এক ব্যবহারকারী এক্সে লিখেছেন, ‘বালেন দাই, এখনই নেতৃত্ব নিন।’
আরেকজন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা আর নেপালের মধ্যে পার্থক্য হলো, আমাদের কাছে একজন সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী আছেন, যিনি কেবল দেশের জন্য কাজ করবেন, নিজের স্বার্থের জন্য নয়।’
কে এই বালেন্দ্র শাহ?
১৯৯০ সালে কাঠমান্ডুতে জন্ম নেওয়া বালেন্দ্র শাহ পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ভারতের বিশ্বেশ্বরাইয়া টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর করেন। রাজনীতিতে আসার আগে তিনি নেপালের আন্ডারগ্রাউন্ড হিপহপ জগতে সক্রিয় ছিলেন। তার গান ও লেখায় দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কণ্ঠ ছিল তীব্র।
২০২২ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঠমান্ডুর মেয়র নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। ৬১ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে তিনি মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের পরাজিত করেন। ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী সাবিনা কাফলের সঙ্গে বসবাস করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত সক্রিয় থেকে তিনি নাগরিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে সরাসরি জনগণের সঙ্গে কথা বলেন।
ওলির পদত্যাগের পর নেপালের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও গভীর হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ১৯ প্রাণের বিনিময়ে থেমে যাওয়া যাবে না। ‘বলেনের মতো’ নেতার নেতৃত্বে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
Leave a Reply