সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট (ইউএই) শেখ মোহামেদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, আজ টেলিফোনে আলাপকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এবং অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে বলে শেখ মোহামেদ আশা প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস অভিনন্দন জানানোর জন্য ইউএই প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান। প্রধান উপদেষ্টা উপসাগরীয় দেশটিকে পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার জন্য তার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বাংলাদেশের পাশের দাঁড়ানোর জন্য ইউএই’কে ভালো বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, উপসাগরীয় দেশটিতে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ কর্মরত রয়েছে। দেশটি বাংলাদেশের রেমিটেন্সের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
দুই নেতা জনশক্তির কর্মসংস্থান, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েও মতবিনিময় করেন।
ফ্রান্স অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেবে : ফরাসি রাষ্ট্রদূত
ফ্রান্স দেশ পুনর্গঠনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুই।
বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ আশ্বাস দেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ প্রধান উপদেষ্টাকে তার সুবিধাজনক সময়ে ফ্রান্স সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে নিহত ছাত্র-জনতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।
এ সময় অধ্যাপক ইউনুস বলেন, ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগঠিত গণবিপ্লব অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশ পুনর্গঠনের নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দেশ পুনর্গঠন একটি বড় কাজ। তবে আমরা এটিকে বড় সুযোগ হিসেবে দেখছি। যদি আমরা এই সুযোগ ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে এটি আমাদের জন্য বড় ব্যর্থতা হবে।’
তিনি দূঢ়তার সাথে উল্লেখ করেন দেশের মানুষ যতক্ষণ আমাদেরকে চাইবে অন্তর্বর্তী সরকার ততক্ষণ থাকবে।
অধ্যাপক ইউনুস বলেন, ‘তিনি দেশে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সমগ্র দেশবাসীকে একটি বড় পরিবারের অংশ হিসেবে বিবেচনা করার অনুরোধ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘কখনো কখনো আমরা জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমরা একে অপরের শত্রু।’
সরকার প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুুতিবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করি এবং সংবিধান মেনে কাজ করি।’
ম্যারি মাসদুপুই বলেন, ফ্রান্স এরই মধ্যে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কাজ করছে। এছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ, মানব পাচার, ফরেনসিক সাইবার অপরাধ এবং সমুদ্র বন্দর ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এবং আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দক্ষতার উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ ব্যাপারে ফ্রান্স সরকার আগ্রহী বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী অক্টোবর মাসে ঢাকায় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ৬৫তম বার্ষিকী উদযাপন করা হবে এবং তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
তিনি বলেন, ফ্রান্স ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে প্যারিসে দুই সপ্তাহব্যাপী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি জানান, ফ্রান্সের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তিনটি সৌর পার্ক স্থাপন এবং দেশে ১৫টি বজ্রপাতপ্রবণ জেলায় ‘বজ্রপাত নিরোধক’ স্থাপনে আগ্রহী।
কানাডাকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে পুনর্গঠনে সহায়তা করার জন্য কানাডাকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।
প্রফেসর ইউনূস সেদেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ এবং উন্নয়ন সংস্থাসহ কানাডার সাথে তার তার দীর্ঘ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে তার সরকারের কানাডার সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তার গল্প কানাডার স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় বিনিয়োগ দরকার,’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে একটি অর্থনীতি পেয়েছে, যেটি বিপুল পরিমাণ ঋণের ভারে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। তিনি বলেন, “আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হল অর্থনীতি ঠিক করা।” তিনি বলেন, “সরকার পূর্ববর্তী শাসনামলে ভেঙেপড়া গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকেও পুনরুদ্ধার করছে এবং শাসনে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা আনছে।”
কানাডার হাইকমিশনার বলেন, তার সরকার প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, কানাডা বাংলাদেশে সার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, উত্তর আমেরিকার দেশ থেকে বাণিজ্য পছন্দ অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে অবশ্যই কারখানায় শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পোশাক ক্রয়কারী ব্র্যান্ডের উদ্বেগের সমাধানের জন্য তার সরকার ‘আইএলও (আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা) মানদ-ের সাথে সমানভাবে’ শ্রমিকদের অধিকার বজায় রাখবে।
মিজ নিকোলস বলেন, কানাডা জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার বিচার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনকে সহায়তা করতেও আগ্রহী।
ইউনূস বলেন, ছাত্রদের নেতৃত্বে বিপ্লব দেশের জন্য নতুন আশার সূচনা করেছে। তিনি বলেন, ‘এটি ঐতিহাসিক সুযোগ। এই সুযোগ হয়তো কখনোই ফিরে আসবে না।’ তিনি বলেন, দেশ ভোটে যাওয়ার আগে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সংস্কার করা হবে। বিগত সরকারের আমলে ‘নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী কারচুপির কমিশনে পরিণত করা হয়েছিল।’
কানাডিয়ান হাইকমিশনার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার বিষয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কানাডা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অবদান রেখেছে এবং রোহিঙ্গা জনগণের জন্য জীবিকার সুযোগ তৈরির আহ্বান জানিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে কিছু রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উপচে পড়া ভিড় কমানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার সরকার রোহিঙ্গা তরুণদের আশা জাগানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।
Leave a Reply