রোববার (১১ জুন) বরিশাল মহানগর ও খুলনা মহানগর নেতাদের কাছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বিগত দুটি জাতীয় ইলেকশন অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন। এছাড়া বিভিন্ন সিটি ও উপনির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন আর কোনো নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল এবং এর অঙ্গসমূহ অংশগ্রহণ করবে না বলে বদ্ধপরিকর। কিন্তু যে বা যারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে এসব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এটিও যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে বিএনপির হাইকমান্ড।
‘এছাড়া অনেক স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছে বলে যে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে তাকেও দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। ফলে বিএনপির পক্ষ হতে তার কর্মী ও সমর্থক এবং সাধারণ ভোটারদের ১২ জুন বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য আহ্বান সংবলিত এ বার্তা পাঠানো হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দলের ৪৩ নেতা-কর্মীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
গত ৫ জুন দিবাগত রাতে রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়।
এদের মধ্যে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সালা উদ্দিন রিমন, ৩৮ জন কাউন্সিলর ও ৪ জন নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এছাড়া বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রুপনকে ‘মীরজাফর’ আখ্যা দিয়ে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। পাশাপাশি কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ১৮ বিএনপি নেতাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। গত ৪ জুন রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর করা চিঠিতে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কৃত কাউন্সিলর প্রার্থীরা হলেন: বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির তিন যুগ্ম আহ্বায়ক ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হাবিবুর রহমান টিপু, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হারুন অর রশিদ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ আমিনুল ইসলাম আমিন। এ ছাড়া নির্বাচনে থাকা মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিম হাওলাদার, সংরক্ষিত ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জাহানারা বেগম, ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সেলিনা বেগম এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে অংশ নেয়া রাশিদা পারভীন। নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব জিয়াউল হক মাসুম, একই ওয়ার্ডের প্রার্থী দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাবের আব্দুল্লাহ সাদি, একই ওয়ার্ডের প্রার্থী বরিশাল জেলা তাঁতী দলের সাবেক সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শাহীন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সিনিয়র সভাপতি হাবিবুর রহমান ফারুক, ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ হুমায়ন কবির লিংকু, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, ২২ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জেসমিন সামাদ, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মহানগরের সাবেক সহসভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ফরিদউদ্দিন হাওলাদার এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির।
এদিকে, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৯ নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত ৩ জুন রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এদিন বহিষ্কৃত নেতাদের নামে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
বহিষ্কৃতরা হলেন: মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে তোতন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের টানা তিনবারের কাউন্সিলর আশফাকুর রহমান, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মো. মাহবুব কায়সার, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি কর্মী ও সাবেক কাউন্সিলর মুহা. আমান উল্লাহ, সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সাবেক সমবায়বিষয়ক সম্পাদক মাজেদা খাতুন, দৌলতপুর থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মুশফিকুস সালেহীন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কাজী ফজলুল কবির ওরফে টিটো, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা ইমরান হোসেন এবং খুলনা মহানগর তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বর।
এছাড়া মহানগর বিএনপির আরও ১৪ নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে দলটি। রোববার (১১ জুন) রাতে খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিনের স্বাক্ষর করা এ নোটিশ দেয়া হয়।
এর আগে, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যারা কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তাদের আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
দল থেকে আজীবন বহিষ্কৃতরা হলেন: হাসান আজমল ভূঁইয়া, আহ্বায়ক, সদর মেট্রো থানা বিএনপি (২৮ নম্বর ওয়ার্ড), হান্নান মিয়া হান্নু, সাবেক আহ্বায়ক, সদর মেট্রো থানা বিএনপি (২৬ নং ওয়ার্ড), মোছলেম উদ্দিন মুসা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক, বাসন মেট্রো থানা বিএনপি (১৭ নং ওয়ার্ড), সফিউদ্দিন আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক, টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপি (৩৭ নং ওয়ার্ড), ফয়সাল সরকার, আহ্বায়ক, গাজীপুর মহানগর শ্রমিকদল (১৭ নং ওয়ার্ড), এ্যাড. নজরুল ইসলাম বিকি, সদস্য সচিব, পূবাইল মেট্রো থানা বিএনপি (৪০ নং ওয়ার্ড), সুলতান উদ্দিন চেয়ারম্যান, সাবেক আহ্বায়ক, পূবাইল মেট্রো থানা বিএনপি (৪২ নং ওয়ার্ড), মজিবর সরকার, সভাপতি, সদর মেট্রো থানা বিএনপি (২৫ নং ওয়ার্ড), মাহবুবুর রশিদ খান শিপু, সদস্য, সদর মেট্রো থানা বিএনপি (২৪ নং ওয়ার্ড), সবদের আহাম্মদ, সদস্য, সদর মেট্রো থানা বিএনপি (২২ নং ওয়ার্ড), খায়রুল আলম, সদস্য, সদর মেট্রো থানা বিএনপি (২৯ নং ওয়ার্ড), জি এস মনির, সদস্য, সদর মেট্রো থানা বিএনপি (২৯ নং ওয়ার্ড), শহিদ, সদস্য, সদর মেট্রো থানা বিএনপি (২১ নং ওয়ার্ড), মোঃ তানভির আহমেদ, সদস্য, সদর মেট্রো থানা বিএনপি (১৯ নং ওয়ার্ড), শাহিন আলম, সদস্য, সদর মেট্রো থানা বিএনপি (১৯ নং ওয়ার্ড), আনোয়ার সরকার, সদস্য, সদর মেট্রো থানা বিএনপি (৩০ নং ওয়ার্ড), রফিকুল ইসলাম রাতা, সদস্য, সদর মেট্রো থানা বিএনপি (১৬ নং ওয়ার্ড), আবুল হাশেম, সদস্য, গাজীপুর মহানগর বিএনপি (৫৫ নং ওয়ার্ড), সেলিম হোসেন, সদস্য, টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপি (৫৫ নং ওয়ার্ড), মোঃ ফারুক হোসেন খান, সাবেক সদস্য, গাজীপুর মহানগর বিএনপি (৩৫ নং ওয়ার্ড), খন্দকার নুরুন্নাহার, সিনিয়র সহ-সভাপতি, গাজীপুর মহানগর মহিলাদল (২৫,২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ড), কেয়া শারমিন, সহ-সভাপতি, গাজীপুর মহানগর মহিলা দল (৫২,৫৩ ও ৫৪ নং ওয়ার্ড), ফিরোজা বেগম, সদস্য, গাজীপুর মহানগর মহিলা দল, (৪৬,৪৭ ও ৪৮ নং ওয়ার্ড), হাসিনা মমতাজ, সিনিয়র সহ-সভাপতি, টঙ্গী পূর্ব থানা মহিলা দল (৪৬,৪৭ ও ৪৮ নং ওয়ার্ড), এ্যাড. আলম, সাবেক সভাপতি, ১১ নং ওয়ার্ড বিএনপি (১১ নং ওয়ার্ড), আউয়াল সরকার, সভাপতি, ৩৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি (৩৭ নং ওয়ার্ড), মোঃ মাহফুজুর রহমান, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, গাছা থানা বিএনপি (৩৪ নং ওয়ার্ড), মোবারক হোসেন মিলন, যুব বিষয়ক সম্পাদক, ৪৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি (৪৯ নং ওয়ার্ড), ইঞ্জি, মনিরুজ্জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক, টঙ্গী পশ্চিম থানা যুবদল (৫১ নং ওয়ার্ড)।
Leave a Reply