ঠাকুরগাঁওয়ে দেশ স্বাধীনের ৫১ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি অরক্ষিত গণকবরগুলো। অসংখ্য গণকবর থাকলেও বেশিরভাগই রয়েছে অরক্ষিত। সরকারিভাবে হাতে গোনা কয়েকটি গণকবর সংরক্ষণ করা হলেও সেগুলোতে প্রকৃত শহীদদের নাম তুলে ধরা হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধে সদর উপজেলার দক্ষিণ ভেলাজান ডাক্তারপাড়ায় ৩১ জন সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে মাটির কূপে ফেলে দেওয়া হলেও সেই গণকবরটি আজও সরকারিভাবে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ফারাবাড়ি হাটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যায় ৩৪ জন প্রাণ দিলেও স্মৃতিফলকে মাত্র একজনের নাম সংরক্ষণ করা হয়েছে।
যুদ্ধের সময় ঠাকুরগাঁও ছিল মহকুমা। বর্তমান ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার ১০টি থানা ছিল এই মহকুমার অন্তর্ভুক্ত। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের পর সারাদেশের মতো ঠাকুরগাঁওয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ করে। নিরস্ত্র বাঙালির ওপর চালায় নির্যাতন। গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠনে তারা মেতে ওঠে স্থানীয়
রাজাকারদের সহায়তায়।
একাধিকবার মাপজোখ হলেও কার্যকরী ব্যবস্থা হয়নি ভেলাজানের অরক্ষিত গণকবরটির। তিন খুঁটির একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয় সেখানে। তারপরে আর কারও নজরে আসেনি।
শহীদ পরিবারের দাবি, গণহত্যায় নিহত শহীদদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হোক।গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ জাদুঘর ট্রাস্টের গবেষক ফারজানা হক বলেন, মাঠ পর্যায়ের গবেষণায় গিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে ৪২টি অরক্ষিত গণকবরের সন্ধান পেয়েছি। যেখানে ৩ থেকে ৩৫ জন শহীদের গণকবর রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভেলাজান ডাক্তারপাড়া, বিন্নাগুড়ি, ময়নাপাড়া, বোচাপুকুর গণকবর।
তিনি আরও বলেন, গণকবরগুলো আবাদি ভূমিতে পরিণত হয়েছে কোথাও কোথাও স্থাপনা তৈরি হয়েছে। কিছু গণকবরের ওপর স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি হলেও রক্ষণাবেক্ষণের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ঠাকুরগাঁওয়ে বেশ কিছু গণকবর সংরক্ষণ করা হলেও কিছু অরক্ষিত আছে। যেগুলোর তালিকা সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে অরক্ষিত গণকবরগুলো সংরক্ষণ করা হবে। সেই সাথে কোন শহীদের নাম বাদ গেলে যাচাইবাছাই করে প্রকৃত শহীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা
হবে।
Leave a Reply