আজ থেকে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা-২০২৫। বিগত এক দশকের মতো এবারও বইমেলা হচ্ছে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশ নিয়ে।
আজ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে বইমেলার উদ্বোধন করবেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য—‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ’। থাকছে জুলাই চত্বরও। এবারের মেলায় বাড়ানো হয়েছে স্টলের সংখ্যা। মেলায় অংশ নিচ্ছে ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬৩৫।
এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠান। মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়নের ৩৬টিই থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকবে ১টি। মেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এবার বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে তবে আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার বাহির পথ এবার কিছুটা সরিয়ে মন্দির গেটের কাছাকাছি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্ল্যান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অংশে মোট চারটি প্রবেশ ও বাহির পথ থাকবে। মেলার নিরাপত্তা নিয়ে ২৪ ঘণ্টা সতর্ক অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশ।GOVT
বইমেলায় অংশগ্রহণকারী ৭০৮ জন প্রকাশকের মধ্যে ৯৯টি স্টল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে, ৬০৯টি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মাণ করা হবে। গত বছর বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী দেশের বৃহত্তম অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ আগামীকাল এর উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অমর একুশে বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় বইমেলার উদ্বোধন করবেন।’
এ বছরের বইমেলার প্রতিপাদ্য বিষয় ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ’। বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম। মেলায় ৩৭টি প্যাভিলিয়ন থাকবে-একটি বাংলা একাডেমিতে এবং ৩৬টি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। লিটল ম্যাগাজিন কর্ণারটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছে গাছের নীচে থাকবে, তাতে প্রায় ১৩০টি লিটল ম্যাগাজিন স্টল থাকবে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আজম ও বাংলা একাডেমির সচিব ড. মো. সেলিম রেজাও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। বইমেলার বিন্যাস গত বছরের মতোই থাকবে জানিয়ে সরকার আমিন বলেন, ‘মেট্রোরেল স্টেশনের কাছাকাছি হওয়ায় বহির্গমন গেটটি মন্দিরের গেটের কাছাকাছি সরানো হয়েছে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্ল্যান্ট ও ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের কাছে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য চারটি পয়েন্ট থাকবে। সরকার আমিন জানান, মেলার সীমানা বরাবর খাবারের স্টলের আয়োজন করা হবে ও মেলা প্রাঙ্গণে ৩০টি শৌচাগার স্থাপন করা হয়েছে, যা মেলার ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
পুলিশ, র্যাব, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের দ্বারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। অনুষ্ঠানস্থলে তিন শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে এবং সব প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে আর্চওয়ে স্থাপন করা হবে। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও মেলার মূল মঞ্চ হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে, বই খোলা এবং ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ স্থাপন করা হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে।
মূল মঞ্চে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় সেমিনার ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। ৮ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি বাদে শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে বিশেষ ‘শিশু প্রহর’। প্রতিবছরের মতো এবারও মেলার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোরদের জন্য শিল্পাচার্য, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রমের আয়োজন করা হবে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, এই বছর অমর একুশে বইমেলা পরিবেশবান্ধব এবং শূন্য-বর্জ্য হওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। ‘সকল অংশগ্রহণকারী এবং বইমেলার অংশীদারদের একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাট, কাপড় ও কাগজের মতো টেকসই উপকরণ ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত ও অনুরোধ করা হচ্ছে।’
বইমেলা প্রতি কর্মদিবসে সকলের জন্য বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। দুপুরের খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘন্টা বিরতি থাকবে। ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মেলা সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
পূর্ববর্তী ঐতিহ্য অনুসরণ করে, ২০২৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি গুণগত মানসম্পন্ন প্রকাশনার জন্য চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরষ্কার, শৈল্পিক উৎকর্ষতায় মুনির চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, শিশু সাহিত্যে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ও নান্দনিক স্টল ডিজাইনের জন্য কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার।
Leave a Reply