ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ে জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি ইসলামী শরিয়াহ বিরোধী সিদ্ধান্ত না নেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বিএনপি। সোমবার ইসলামী আন্দোলনের বাংলাদেশ আমীর ও চরমোনাই পীর মাওলানা সৈয়দ রেজাউল করীমের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের একথা জানান। বৈঠকে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন-দুই দলই দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে ইসলামী আন্দোলনের পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়নি বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। এর আগে বেলা ১২টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।
বৈঠক সূত্র জানায়, আলোচনায় সংখ্যানুপাতের ভিত্তিতে সংসদে আসন নির্ধারণ এমন পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনে নিজেদের প্রস্তাব তুলে ধরেন ইসলামী আন্দোলনের আমীর। বিএনপি’র তরফে এ বিষয়ে বলা হয়, এই পদ্ধতিতে বিএনপি নির্বাচন চায় না। এছাড়া ভোটকেন্দ্রিক ঐক্য গড়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। ইসলামী আন্দোলনের নেতারা এ বিষয়ে বলেছেন, নির্বাচনের আগের পরিস্থিতির উপর এটি নির্ভর করবে।
বৈঠক শেষে আলোচনার বিষয় সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে ইসলামী আন্দোলনের আমীর মাওলানা সৈয়দ রেজাউল করীম সাহেবের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। এই আলোচনায় আমরা মোটামুটি ১০টি বিষয়ে একমত হয়েছি।
১০ দফার যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- আধিপত্যবাদ, সমপ্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম টেকসই রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচার, ভোটাধিকারসহ সকল মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য গড়া, ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ, দ্র্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে ও সকল অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিকীকরণ, আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা না বলা, আগামীতে আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদী শক্তি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সে ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং প্রশাসনে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত অপসারণ করা। ইসলামী শরিয়াহবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়া এবং ইসলামবিরোধী কোনো কথা কেউ বলবে না, এ ব্যাপারে দুই দলই ঐকমত্য প্রকাশ করেছে।
রেজাউল করীম বলেন, যে কথাগুলো আমাদের হয়েছে, আমরা তাদের সঙ্গে, আমাদের সঙ্গে এবং দেশ, মানবতা এবং রাজনীতির ব্যাপারে- এগুলো বিএনপি মহাসচিব তিনি আপনাদের (গণমাধ্যমে) উপস্থাপন করেছেন। এগুলো আমাদেরও একই কথা।
দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে আমীর বলেন, এটা আমরা আগের থেকেই বলেছি যে, দ্রুত সময়ে আমরা যে শব্দটা ব্যবহার করেছি যে, খুব বেশি সময় না নিয়ে যৌক্তিক, সেই যৌক্তিক সময়টা আমরা বলেছি, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে, এরকম একটা কথা আমরা বলেছি। আর ৬ মাস তো প্রায় চলেই গেল, আর এক বছরের মধ্যেই সুন্দর একটা জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, এটাই মূলত আমাদের কথা। আমাদের দুই দলের মধ্যে আলোচনা ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে বলেও মত প্রকাশ করেন ইসলামী আন্দোলনের আমীর।
বৈঠকে ইসলামী আন্দোলনের আমীরের সঙ্গে ছিলেন দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম প্রমুখ।
Leave a Reply