ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি দেশের সব শক্তিকে সজাগ এবং সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করুন, জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে বিএনপি অবশ্যই বিজয়ী হবে আজ বুধবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির উদ্যোগে ‘৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে’ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই। মাফিয়া সরকার বিনা ভোটে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সময় বিশ্বে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার অপকৌশলে লিপ্ত ছিল।
তারেক রহমান শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ক্ষমতা হারিয়ে ৫ আগস্টের অপশক্তি এখন কিন্তু আবার বিশ্বে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। সুতরাং ৫ আগস্টের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি অবশ্যই বাংলাদেশের সব শক্তিকে সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে। একদিন পরে এই সরকারের মেয়াদ তিন মাস পূর্ণ হবে। এই তিন মাসে তাদের সফলতা নিয়ে আলোচনার যথেষ্ট সময় নয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ ঢাকা মহানগর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৭ নভেম্বর কোনো দিবস নয়, ৭ নভেম্বর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ইতিহাস রক্ষার ইতিহাস। বাংলাদেশের উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন ও দর্শনের মাধ্যমে স্বৈরাচার পতন ঘটিয়ে ৯০-এ বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছি কিন্তু সামনের ভবিষ্যতের দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। ড. ইউনূসকে আমরা শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস করি। তিনি অতিদ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, ৭ নভেম্বর থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের শপথ নিতে হবে দেশে কোনো আধিপত্যবাদী ফ্যাসিস্টকে ঠাঁই দেওয়া যাবে না। কারণ, সংকট এখনো কাটেনি; ঐক্য ধরে রাখতে হবে। আগামী দিনে রাজনীতিবিদদের নতুন নতুন চিন্তা করতে হবে। ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান নতুন করে দেশের মাটিতে আবির্ভাব হয়েছিলেন। তবে আমাদের হৃদয়ে আসন গড়েছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে। তাঁকে শ্রদ্ধায় রাখতে হলে ব্যক্তি পূজার ট্রেডিশন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই নভেম্বর এমন একটি দিবস, যা জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, জাতিসত্ত্বা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। অথচ গত ১৭ বছরে শেখ হাসিনার সরকার আমাদের এ দিবস পালন করতে দেয়নি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। তবে এই আন্দোলন ছিল বিএনপির ১৬ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের ফসল। তাই এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো অতি দ্রুত একটি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা দিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করা।
Leave a Reply