বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে সে দেশের প্রথম পারমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুর।
প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বলেছেন, সামনের বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রথম ইউনিটের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপরই প্রথম চুল্লি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যাবে।
গত বুধবার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি (রিঅ্যাকটর প্রেশার ভেসেল) স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এই কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ শুরু হলো।পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর বা কমিশনিং প্রক্রিয়ায় এই চুল্লী স্থাপন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরমাণু বিজ্ঞানীরা রিঅ্যাকটর প্রেশার ভেসেলকে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ‘হার্ট বা হৃৎপিণ্ড’ বলে থাকেন।
পাবনা জেলার রূপপুরের এই পারমাণবিক চুল্লি নির্মিত হয়েছে রাশিয়ায়।
রূপপুর কেন্দ্রে দুটি ইউনিটে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে প্রাথমিকভাবে এক লক্ষ ১৩,০০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে একক প্রকল্প হিসেবে এটি সবচেয়ে বড় কোনো অবকাঠামো প্রকল্প।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান সাংবাদিকদের বলেছেন, “আগামী বছরের মধ্যেই প্রথম জ্বালানিও চলে আসবে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা রেডি। আগামী বছরের ডিসেম্বর থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করতে পারবে।”
প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেছেন, ”প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের মধ্যে আমরা রেডি থাকবো। আমাদের সমস্ত ইনফ্রাকচার যদি রেডি থাকে, তাহলে আমরা শুরু করতে পারবো।”
”আমরা আশা করছি, ২০২৩ সালের শেষ দিকে প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হবে। এরপরে আমরা কমিশনিং শুরু করবো। এরপর জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যাবে। এই কমিশনিংয়ের কাজ ২০২৩ সালের শেষ দিকে শুরু হওয়ার কথা।”
দ্বিতীয় ইউনিটটি জাতীয় গ্রিডে যাবে ২০২৫ সালে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত প্রথম ইউনিটের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শেষ হয়েছে ৪৮ শতাংশ। আর পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৫৫ শতাংশ।
সামনের বছর সেপ্টেম্বর নাগাদ প্রথম চুল্লির জন্য জ্বালানি পাওয়ার আশা করছেন কর্মকর্তারা। সেই বছরের অক্টোবর থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর কথা ভাবা হচ্ছে।
তবে পুরোপুরি সরবরাহ শুরু করতে ২০২৪ সালের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি হয়ে যাবে বলে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
প্রকল্প অনুযায়ী, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ডিসেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যে চালু করার কথা রয়েছে।
রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশন।
বাণিজ্যিকভাবে এই কেন্দ্রের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ৬০ বছর।
যদিও কর্মকর্তারা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে সরবরাহ শুরুর আশাবাদের কথা বলছেন, কিন্তু সেটি পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।
এর আগে ২০২২ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম এবং ২০২৩ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।
কিন্তু এখন প্রথম ইউনিটের জন্য ২০২৪ সালের মাঝামাঝি আর দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য ২০২৫ সাল লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এজাজ হোসাইন বলছেন, ”কীভাবে কাজ হচ্ছে, সেটা তাদের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। এটা অসম্ভব না, আমরা আশা করতে পারি। তবে সেখানে বেশ ভালো রকম প্রোগ্রেস হচ্ছে।
“কিন্তু সঞ্চালন ব্যবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। সেটা ঠিক সময়ে না হলে তো বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাবে না।”
তবে কর্মকর্তারা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়ার আশাবাদ দেখালেও তা জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ উৎপাদন করা বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নেয়ার জন্য যে সঞ্চালন লাইন দরকার, সেটা এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মোঃ ইয়াকুব ইলাহি চৌধুরী বলছেন, ”পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেয়ার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এখানে আমাদের দুটা রিভার ক্রসিং আছে। যমুনা নদীতে দুটি আর পদ্মা নদীতে একটি। সেগুলোর ওপর দিয়ে সঞ্চালন লাইন নেয়ার জন্য কিছুদিন আগে টেন্ডার করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। এসব কাজ শেষ হতে ২০২৪ সালের অগাস্ট পর্যন্ত সময় লেগে যাবে।”
এই সময়ের আগে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ করা সম্ভব হবে না।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজের জন্য বাঘাবাড়ি থেকে রূপপুর ২৩০ কেভির লাইন গত জুন মাসে সম্পন্ন করেছে পিজিসিবি।
তবে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে এই সঞ্চালন লাইনের কাজ আরও পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ঠিকাদারের কাজ শুরুর জন্য যে প্রাথমিক টাকা দিতে হয়, ডলার সংকটের কারণে সেটাও এখনো দিতে পারেনি পিজিসিবি।
ফলে কাজ শুরু হতে দেরি হচ্ছে।
Leave a Reply