প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রিয়ার পর শরণার্থীদের পারিবারিক পুনর্মিলন স্থগিত করতে আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে জার্মানির নতুন সরকার৷ পরবর্তী মন্ত্রিসভা বৈঠকে আইনটির খসড়া উত্থাপনে প্রস্তুত জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷আগামী ২৮ মে মন্ত্রিসভা বৈঠক করতে যাচ্ছে চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের সরকার৷ ওই বৈঠকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডট নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির শরণার্থীদের ক্ষেত্রে পারিবারিক পুনর্মিলন বন্ধে খসড়া আইনটি উত্থাপন করবেন৷ রোববার (২৫ মে) জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
কী থাকছে আইনে?
খসড়া আইনটিতে বলা হয়েছে, সীমিত সুরক্ষা মর্যাদা পাওয়া একজন শরণার্থী অন্তত দুই বছর পর তার আত্মীয়-স্বজনকে জার্মানি আনার সুযোগ পাবেন, তার আগে নয়৷ তবে, বিশেষভাবে জরুরি বলে প্রতীয়মান হলে পারিবারিক পুনর্মিলনের শর্ত শিথিল রাখারও বিধানও আইনে রাখা হচ্ছে৷
অবশ্য এমন আইন প্রণয়নের ইঙ্গিত সরকার গঠনের আগেই দেয়া হয়েছিল৷ এসপিডি-এর সঙ্গে জোট করেই ক্ষমতায় আসে চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল দল সিডিইউ/সিএসইউ৷ দুই দলের জোট চুক্তির সময় এমন আইন প্রণয়নের কথা তারা উল্লেখ করেছিলেন৷
জার্মানির নতুন সরকারের এমন আইন তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে সর্বপ্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল দেশটির সংবাদমাধ্যম বিল্ড৷ সংবাদমাধ্যমটিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডোব্রিন্ডট বলেছিলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে অন্তত এক হাজার মানুষ পারিবারিক পুনর্মিলনের আওতায় জার্মানিতে আসতে পারছেন৷ এখন তা শেষ হবে৷”
তিনি আরো বলেছিলেন, ‘‘জার্মানিতে (অভিবাসীদের) আসার বিভিন্ন সুযোগ বা পুল ফ্যাক্টরগুলো আমাদের কমিয়ে আনতে হবে৷ এর মধ্য দিয়ে আমরা দেখাতে চাই, জার্মানিতে অভিবাসন নীতি বদলে গেছে৷”
সমালোচনায় গ্রিন পার্টি
সরকারের এমন পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে গ্রিন পার্টি৷ দলটির অভ্যন্তরীণ নীতি বিষয়ক মুখপাত্র শাহিনা গাম্বির ডিপিএ-কে বলেন, ‘‘নতুন ফেডারেল সরকার সমাজের দুর্বলতম সদস্যদের প্রতি বিরূপ আচরণের মধ্য দিয়ে প্রতীকী রাজনীতির উপর জোর দিচ্ছে এবং আইন ভঙ্গ করতেও দ্বিধা করছে না৷”
পারিবারিক পুনর্মিলন স্থগিত করা ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশন এবং জাতিসংঘের শিশু অধিকার কনভেনশনের লঙ্ঘন জানিয়ে শাহিনা বলেন, ‘‘এই নীতি অনৈতিক৷ এটি সামাজিক সংহতির মধ্যে একটি ফাটল তৈরি করে৷”
অবশ্য এর আগে ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত জার্মানিতে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে যারা শরণার্থী মর্যাদা পাননি, তাদের ক্ষেত্রে পারিবারিক পুনর্মিলন স্থগিত করেছিল সরকার৷
কিন্তু ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে প্রতিমাসে শরণার্থী মর্যাদাবিহীন আশ্রয়প্রার্থীদের পরিবারের এক হাজার সদস্যকে পারিবারিক পুনর্মিলনের আওতায় জার্মানি আসার সুযোগ দেয়া হয়েছে৷
পারিবারিক পুনর্মিলনের দাবিতে প্রতিবাদকারী এক আশ্রয়প্রার্থী নারী৷পারিবারিক পুনর্মিলনের দাবিতে প্রতিবাদকারী এক আশ্রয়প্রার্থী নারী৷
২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত জার্মানিতে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে যারা শরণার্থী মর্যাদা পাননি, তাদের ক্ষেত্রে পারিবারিক পুনর্মিলন স্থগিত করেছিল সরকার৷ এর প্রতিবাদে ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি বার্লিনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন আশ্রয়প্রার্থীরা৷ছবি:
সদ্য বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকার পারিবারিক পুনর্মিলনের ক্ষেত্রে সব বিধি-নিষেধ তুলে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল৷ কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে জোট সরকার ভেঙে গেলে পরিকল্পনাগুলো আর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি৷
এদিকে, ৩০টিরও বেশি এনজিও পারিবারিক পুনর্মিলনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷
পরিবর্তন আসছে নাগরিকত্ব আইনেও
দক্ষ কর্মীদের কাছে জার্মানিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেছিল এসপিডি-এর নেতৃত্বাধীন সদ্য বিদায়ী জোট সরকার৷ ওই আইনের একটি বিধান ছিল, অভিবাসীদের মধ্যে যারা জার্মান সমাজের মানিয়ে নেয়ার (ইন্টিগ্রেশন) ক্ষেত্রে ‘বিশেষ সাফল্য’ দেখাতে পারবেন, তারা তিন বছর পরই নাগরিকত্ব চাইতে পারবেন৷ বিশেষ সাফল্যের মধ্যে রয়েছে: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভালো ফল করা, কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করা, ভাষাগত দক্ষতা এবং স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে পারদর্শীতা৷
নতুন সরকার নাগরিকত্ব আইনের এই বিধানটিও বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করছে৷ আগামী ২৮ মে জার্মান মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্তও একটি আইনের খসড়া উত্থাপন করা হতে পারে৷
‘টার্বো ন্যাচারালাইজেশন’ বা মাত্র তিন বছরের মধ্য নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ সম্পর্কে রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ বলছে, ভবিষ্যতে এটি আর সম্ভব হবে না৷
এই খসড়া বিলটির অনুলিপি দেখেছে জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ৷ এই খসড়া আইনটির উদ্দেশ্য হলো, ‘‘নাগরিকত্বের অর্জনে পূর্বশর্ত হিসাবে দেশটিতে আইনি বসবাসের গুরুত্বকে শক্তিশালী করা৷”
১১ জুলাই থেকে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হওয়ার আগেই জার্মান পার্লামেন্টের ‘বুন্ডেসটাগ’ ও ‘বুন্ডেসরাট’-এ বিলটি পাস করাতে চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডোব্রিন্ডট৷
এসপিডির সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় আসে রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ৷ ৬ মে দায়িত্ব নিয়েছে চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের সরকার৷ ক্ষমতা নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডোব্রিন্ডট৷
সীমান্তে তল্লাশি কঠোর করার পাশাপাশি আশ্রয়প্রার্থীদের সীমান্ত থেকেই ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ডোব্রিন্ডট৷ সমালোচকেরা বলছেন, জার্মানির এই পদক্ষেপ ইইউ আইনের লঙ্ঘন৷ কিন্তু সেদিকে মোটেও কান দিচ্ছে না সরকার৷
টিএম/এসিবি (ডিপিএ)
Leave a Reply